কক্সবাজারে পাহাড় ধসে নিহত ৬, রেকর্ড বৃষ্টিতে পানিবন্দি শতাধিক গ্রাম
প্রায় তিনদিন ধরে চলা ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় মা, দুই শিশু ও তিন ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর পাহাড় ধসে চাপা পড়ে তারা মারা যান।
এদিকে বৃষ্টির কারণে জেলা শহরের প্রায় সব সড়ক তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
পাহাড় ধসে নিহতরা হলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ ডিককূল এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি (২১), তার দুই মেয়ে মিহা জান্নাত নাঈমা (৫) ও লতিফা ইসলাম (১), উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ভারি বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে মিজানুর রহমানের বাড়ি চাপা পড়ে। এতে মিজানুরসহ পরিবারের চারজন চাপা পড়েন। প্রতিবেশীরা তাৎক্ষণিকভাবে মিজানুরকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বাঁচানো যায়নি।
অন্যদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজা নয়ন জানান, উখিয়ার হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে তিন ভাই আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে আজ শুক্রবার ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রায় তিন দিনের এই বৃষ্টিতে কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সব সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সৈকত সংলগ্ন এলাকা ও বিভিন্ন মাকের্ট। ফলে কয়েক হাজার পর্যটক হোটেলে আটকা পড়েছেন।
শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচামিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, এই ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এ ওয়ার্ডের ১০ হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমা সরওয়ার টিপু জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে কয়েক শ ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে তিনটি ব্রিজ। ফলে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, 'ভারি বর্ষণে হোটেল মোটেল জোনগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ ও উখিয়ার প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৮০টি গ্রাম। এর মধ্যে টেকনাফেই ৬০টি গ্রাম। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। উখিয়ার রাজাপালং, জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের আর ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়া কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, ঝিলংজায় পাহাড় ধসে নিহত তিন জনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। পানিবন্দি এলাকা তালিকা তৈরি ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজ করা হচ্ছে।