রুশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীতে পরিণত করার নির্দেশ পুতিনের
রুশ সেনাবাহিনীর সক্রিয় সৈন্য বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার বাড়িয়ে ১৫ লাখ সক্রিয় সৈন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক আদেশে, পুতিন সশস্ত্র বাহিনীর সামগ্রিক পরিধি ২৩ লাখ ৮০ হাজারে উন্নীত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য থাকবে ১৫ লাখ।
এ পদক্ষেপের মাধ্যমে রুশ সেনাবাহিনী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী হয়ে উঠবে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী রয়েছে চীনের।
একটি শীর্ষস্থানীয় সামরিক থিংক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর তথ্য অনুযায়ী, সেনা সদস্য বৃদ্ধির ফলে সক্রিয় সেনাবাহিনীর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী হবে দেশটির; চীনের পরেই থাকবে রাশিয়ার সেনাবাহিনী।
আইআইএসএস আরও জানিয়েছে, বেইজিংয়ের ২ মিলিয়নের বেশি সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় সৈন্য বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন পুতিন। বর্তমানে, রুশ বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে বিস্তীর্ণ ১ হাজার কিলোমিটার ফ্রন্টলাইন অংশে অগ্রসর হয়েছে এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
যদিও রাশিয়ার জনসংখ্যা ইউক্রেনের তুলনায় তিন গুণ বেশি এবং তারা ইউক্রেনে লড়াই করার জন্য লাভজনক চুক্তিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে সফল হয়েছে, তবুও তারা ইউক্রেনের বাহিনীর মতোই যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেহেতু যুদ্ধের শেষের কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না, দুই পক্ষই তাদের ক্ষতির সঠিক পরিমাণকে সামরিক গোপনীয়তা হিসেবে বিবেচনা করছে।
রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রে কার্তাপোলভ জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পরিকল্পনার মাধ্যমে বাহিনীর আকার ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে, যাতে এটি বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং "সাবেক বিদেশি অংশীদারদের" আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
রুশ পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ সংবাদপত্রকে কার্তাপোলভ বলেন, "সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ও সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে কারণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ড ন্যাটো ব্লকে যোগদান করেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এখন সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো দরকার।"
২০২২ সাল থেকে পুতিন এখন পর্যন্ত দুবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পর, রুশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবার ১ লাখ ৩৭ হাজার এবং পরেরবার ১ লাখ ৭০ হাজার সৈন্য বাড়ানো হয়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রাশিয়া ৩ লাখেরও বেশি সৈন্য মোবিলাইজ (যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত) করেছিল, যার ফলে কয়েক হাজার তরুণ সে সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ক্রেমলিন বর্তমানে কোনো নতুন মোবিলাইজেশন পরিকল্পনার কথা না জানালেও বলেছে, ইউক্রেনে লড়াই করার জন্য আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যার ওপর নির্ভর করেই পরিকল্পনা করা হবে।