বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ডিমের মূল্য ডজনে ২৩ টাকা বেশি
সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডিম বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে। ১৫ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
নতুন ঘোষিত দর অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের মূল্য ১১ টাকা ৮৭ পয়সা—অর্থাৎ প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালী মুরগির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা বেঁধে দেওয়া হয়।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়, যা নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৩ টাকা বেশি।
অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মগবাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে ডিমের দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে কারওয়ানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ লিটন বলেন, 'আমরা পাইকরি ডিম ডজন বিক্রি করছি ১৫৫ টাকা করে। খুচরা ব্যবসায়ীরা এ ডিম কিনে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সে দামে তো আমরা কিনতেও পারি না।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগির এই 'যৌক্তিক মূল্য' নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে উৎপাদন বেশি হলেও উৎপাদন খরচ বেশি থাকায় ডিমের দাম বেশি হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, 'প্রাণিসম্পদ ও ফিড সিন্ডিকেট মাফিয়া চক্র বহাল রেখে ডিম ও মুরগির দাম কমানো যাবে না। আমরা ফিড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করব, কেন তারা বেশি দাম রাখছেন ফিডের। আন্তর্ডাতিক বাজারের দ্বিগুন দাম আমাদের দেশে ফিডের।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দেশে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকা ২৯ পয়সা, আর ভারতে ডিম উৎপাদন খরচ ৫ টাকাা। এখন কেন এখানে খরচ বেশি হচ্ছে, সেটা বের করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। তাহলেই ডিমের দাম কমে যাবে।'
প্রসঙ্গত, কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সে ক্ষমতাবলে সম্প্রতি ডিম, মুরগির দাম বেঁধে দিয়েছে সরকারের এ সংস্থা।
তবে কেউ এই বেঁধে দেওয়া দাম না মানলে কোনো ধরনের শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা নেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী, তদারকির মাধ্যমে তারা কেবল অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তখন দ্বারস্থ হতে হয় প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। সংস্থাটি থেকে তাই বিভিন্ন সময় কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুর জব্বার মন্ডল গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাজার মনিটরিং করে গণমাবাধ্যমকে বলেন, 'প্রতি ডিমে ১ টাকা লাভ করার প্রবণতা আমরা দেখেছি। আমাদের উপস্থিতিতে তারা দাম কমিয়ে দিয়েছে। যেসব আড়তদার বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে, তারা কেন বেশি দামে বিক্রি করছে সে বিষয় আমাদের তদন্ত হবে।'