জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্র রাজনীতি ও সব ধরনের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর রাজনীতি বন্ধের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের একদফা দাবিতে দুপুর ৩টায় শহীদ মিনার চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন।
এ সময় তারা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিন্ডিকেট সভা ডেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লা হত্যাকাণ্ডে ছাত্রদলের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে অন্তত ৫ জন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা পুরনো শিকল ভেঙে নতুন শিকলে বাঁধা পড়তে চাই না।
এ সময় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল ইসলাম বলেন, 'বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে ক্যাম্পাসে পুলিশের গুলিতে আহত হই। নতুন ভিসি নিয়োগের পর আমরা তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যা চায় আমি তা-ই করব। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি আমিসহ সকল শিক্ষার্থীর দাবি। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করুক।'
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, 'উপাচার্য কতদিনের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে জাকসু নির্বাচন দেবেন, তা আমরা জানতে চাই। ১৫ জুলাই ও ১৭ জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনার এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। কবে নাগাদ মামলা করা হবে, আমরা উপাচার্যের কাছ থেকে সে বিষয়ে শুনতে চাই। তবে আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর রাজনীতি বন্ধ চাই। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'
সমাবেশে উপস্থিত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান
বলেন, 'উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে করার চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক পদ শূন্য ছিল। গত ১৭ তারিখ তা পূরণ হয়েছে। ছাত্রদের দাবিগুলো নিয়ে আমরা আগামী রবিবার সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দেব।'
পরে উপাচার্যের এই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার প্রত্যাখান
আজ ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী দুঃশাসনে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। তবে এই প্ল্যাটফর্মের কিছু সমন্বয়ক ইদানীং শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। আমরা মনে করি, জাবিতে এই ব্যানারের প্রয়োজন শেষ হয়েছে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। আন্দোলনে আহত হয়ে এক মাস হাসপাতালে ছিলাম। এই সময় কোনো সমন্বয়ক আমার খোঁজ নেয়নি। আমার বন্ধু শাকিল গুলিবিদ্ধ হলো, তাকে কেউ ফোন করেনি। কিছুদিন আগে আনসারদের আন্দোলনে একজন মারা গেলেন, সমন্বয়কদের বাঁচাতে। তার জানাজা দিল, মিটিং করল, কিন্তু পরে তার পরিবারের সাথে আর যোগাযোগ করেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই অনতিবিলম্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হোক। প্রয়োজনে সমন্বয়করা পদত্যাগ করুক, নাহলে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে। আমরা কোনো ডানে নেই, বামে নেই। আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চাই।'
এর আগে, বেলা ৩টার দিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
গণমাধ্যমকে সমন্বয়কদের বক্তব্য না নেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান তারা।