কে এই রিনসন জস? লেবানন পেজার ব্লাস্টে কীভাবে তার নাম এলো?
লেবাননের বৈরুতে বিভিন্ন স্থানে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে রিনসনে জস নামে এক নরওয়ের নাগরিক ও বুলগেরিয়ার একটি আইটি কোম্পানির খোঁজ মিলেছে। জানা যায়, ওই ব্যক্তির কোম্পানি লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার পেজার সরবরাহ করেছে।
এদিকে লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ইসরায়েল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৩০০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার কারণে দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ইসরায়েল সরাসারি কোনো মন্তব্য করেনি।
তদন্তে সন্দেহভাজন ব্যক্তি রিনসন একজন ভারতীয়। তিনি ভারতের কেরালায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এ বিস্ফোরণের জন্য তাকে দায়ী করছে নিরাপত্তা সংস্থা। সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুসারে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার পেজার সরবরাহ করেছে রিনসনের মালিকানাধীন বুলগেরিয়ান কোম্পানি বুলগেরিয়ার কোম্পানি নোর্টা গ্লোবাল।
কে এই রিনসন জস?
২০২২ সালের এপ্রিলে বুলগেরিয়ার কোম্পানি নোর্টা গ্লোবাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের কেরালার ওয়াইনাড থেকে আসা রিনসন নরওয়েতে একটি কনসাল্টেন্সি ফার্ম পরিচালনা করতেন এবং একটি মালায়ালি কমিউনিটির সক্রিয় সদস্যও ছিলেন।
ক্যারিয়ার সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম লিঙ্কডইনে তার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, রিনসন নোর্টালিংকের উদ্যোক্তা। এটি একটি আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। নোর্টা গ্লোবালকে নোর্টালিংকের গোপন কোম্পানি বলে দাবি করা হচ্ছে।
এদিকে তার নিকট আত্মীয়রা তার পেজার সরবরাহের চুক্তি সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি।
জোসের এক আত্মীয় থ্যাঙ্কচান বলেন, "রিনসন দশ বছর আগে চাকরি ও পড়াশোনার জন্য কেরালা ছেড়েছিলেন। তিনি সর্বশেষ গত নভেম্বরে বাড়ি এসেছিলেন এবং জানুয়ারিতে ফিরে যান। আমাদের বলা হয়েছিল যে তিনি একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। আমরা জানি না তিনি কোনো কোম্পানি চালাচ্ছেন কিনা। কয়েক দিন আগে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিন্তু নতুন ঘটনার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রিনসন কোনো অবৈধ কাজে জড়িত নন।"
তদন্তে নোর্টা গ্লোবালের নাম কীভাবে এলো?
রয়টার্স স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সোফিয়া-ভিত্তিক নোর্টা গ্লোবাল লিমিটেড হিজবুল্লাহকে পেজার সরবরাহে সহায়তা করেছে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জাতীয় সম্প্রচারক বিটিভি জানায়, এই লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত ১৬ লাখ ইউরো বুলগেরিয়া হয়ে হাঙ্গেরিতে পাঠানো হয়েছে।
টেলেক্স জানিয়েছে, যদিও কাগজপত্র অনুযায়ী গোল্ড অ্যাপোলোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিএসি কনসাল্টিং ফার্ম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তির পেছনে ছিল নোর্টা গ্লোবাল লিমিটেড।
তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলোর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির মাধ্যমে বিএসি কনসাল্টিং ফার্মের নাম সামনে আসে। তাছাড়া লেবাননে বিস্ফোরিত পেজারগুলোতে গোল্ড অ্যাপোলোর লোগোও পাওয়া গেছে।
তবে বুলগেরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এসএএনএস) নোর্টা গ্লোবালকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো যন্ত্র বুলগেরিয়া থেকে রপ্তানি বা উৎপাদন করা হয়নি।
অপরদিকে নোর্টার বুলগেরিয়ার সদর দপ্তর সোফিয়ার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে নিবন্ধিত। এ ভবনে ২০০টি কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে সেখানে নোর্টার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার নোর্টা গ্লোবালের ওয়েবসাইটের সব কন্টেন্টও মুছে ফেলা হয়েছে। আগে ওয়েবসাইটটি ইংরেজি, বুলগেরিয়ান ও নরওয়েজিয়ান ভাষায় পরামর্শ, প্রযুক্তি সমন্বয়, নিয়োগ এবং আউটসোর্সিং সেবা প্রদান করত।