লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় ৫০ শিশু ও ৯৪ নারীসহ নিহত অন্তত ৫৫৮, আহত ১৮৩৫
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল সোমবারের এ হামলায় বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৫০ শিশু ও ৯৪ জন নারীসহ অন্তত ৫৫৮ জন নিহতের কথা জানা গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৮৩৫ জন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হতাহতের তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
তবে নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক বা যোদ্ধা, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ বলেছেন, হাজার হাজার পরিবার বিমান হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ১৯৭৫-৯০ সালের গৃহযুদ্ধের পর লেবাননের আর কখনও একদিনে এত মানুষের প্রাণ যায়নি।
গতকাল সোমবার লেবাননে এ হামলা চালায় ইসরায়েল। প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক হামলা মনে করা হচ্ছে।
২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে হিজবুল্লাহ যে অবকাঠামো তৈরি করেছিল, সেসব ধ্বংস করতে গোষ্ঠীটির ১ হাজার ৩০০টি অবস্থান লক্ষ্য হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আক্রমণের ফলে হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
জবাবে হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েল লক্ষ্য করে ২০০-র বেশি রকেট ছুড়েছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্যারামেডিক।
পরিস্থিতি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বনেতারা দুই পক্ষকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, লেবানন 'আরেকটি গাজায়' পরিণত হোক, সেটি তিনি চান না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে তারা 'অল্প সংখ্যক' অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে।
গাজায় যুদ্ধের ফলে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় এক বছরের আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ে কয়েকশো মানুষ নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। এছাড়া সীমান্তের উভয়পাশেই হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা হামাসের সমর্থনে কাজ করছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না।
ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রথম ঢেউ শুরু হয় সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায়।
একজন নারী বিবিসিকে বলেন, 'মিসাইলগুলো আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। ভয়ংকর ব্যাপার! বোমার শব্দে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি। এমন কিছু আমরা আশা করিনি।'
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানিয়েছে, সংবাদ সারা দিনজুড়ে দক্ষিণ লেবাননের সিডন, মারজায়ুন, নাবাতিহ, বিনতে জেবিল, টায়ার, জেজিন ও জাহরানি জেলার পাশাপাশি বেকা উপত্যকার কয়েক ডজন শহর ও গ্রামে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
সন্ধ্যায় রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলির বির আল-আবেদ এলাকায় একাধিক মিসাইল আঘাত হানে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
লেবাননের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্য ছিলেন দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার আলি কারাকি। তবে তাকে হত্যা করা গেছে কি না, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। অবশ্য তিনি 'ভালো' গেছেন এবং নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহর মিডিয়া অফিস।
বোমা হামলার ফলে মানুষ মরিয়া হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পাঠানো অডিও ও টেক্সট বার্তায় সতর্ক করা হয় যে যেসব ভবনে হিজবুল্লাহ অস্ত্র মজুত করেছে, সেখান থেকে অবিলম্বে সরে যেতে হবে।
লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি বলেছেন, বৈরুতে তার মন্ত্রণালয় ভবন খালি করে দেওয়ার ইসরায়েল থেকে ফোনকল পেয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সোমবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের বিমান দক্ষিণ লেবানন ও বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর প্রায় ১ হাজার ৩০০টি অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। আইডিএফের দাবি, ওইসব জায়গায় রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, লঞ্চার ও ড্রোন লুকানো রয়েছে।
গতকাল এক ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, দক্ষিণের ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে গতকাল স্থানীয় সময় সকালে যেসব এলাকায় হিজবুল্লাহ সক্রিয় রয়েছে এবং যেসব ভবনে হিজবুল্লাহর অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে, সেসব এলাকা ও ভবন থেকে লেবাননের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে উত্তরাঞ্চলের দিকে সরে যেতে দেখা যায়। গতকালের হামলার আগে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ লেবাননের এক লাখ ১০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।