এবার সুন্দরবনের রাস উৎসব দেখতে পারবেন সব ধর্মের পর্যটকেরা, মানতে হবে বেশকিছু নিয়ম
চলতি মৌসুমে সুন্দরবনের দুবলার চরে সব ধর্মের পর্যটকদের জন্য রাস উৎসব উন্মুক্ত করেছে বন বিভাগ। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গত চার বছর ধরে কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই এ উৎসবে যাওয়ার অনুমতি ছিল।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দুবলার চরে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী 'রাসপূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান' অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানিয়েছেন, নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এবার ৫টি অনুমোদিত পথ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। তীর্থযাত্রীরা লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোট ও দেশি নৌকা ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড বলেন, এ বছর তারা বন বিভাগকে অনুরোধ জানান যেন নিয়মিত পর্যটকদের মতোই রাস উৎসবের সময়েও তাদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বন বিভাগ এতে সম্মতি দিয়েছে।
অনুমোদিত পাঁচটি রুট হলো বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বলনদী–পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী থেকে দুবলার চর; কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা ও বজবজা হয়ে শিবসা নদী–মরজাত দিয়ে দুবলার চর; নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা–মরজাত নদী দিয়ে দুবলার চর; ঢাংমারী বা চাঁদপাই স্টেশন হয়ে তিনকোনা দ্বীপ থেকে দুবলার চর; এবং বগী–বলেশ্বর–সুপতি স্টেশন থেকে কচিখালী–শেলার চর হয়ে দুবলার চর।
মানতে হবে যে-সব নিয়ম
বন বিভাগ জানায়, ১৪–১৬ নভেম্বরের জন্য তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের রাসমেলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে। এ সময় বনের সুরক্ষার জন্য তাদেরকে বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
রাসপূর্ণিমায় যেতে প্রবেশ পথে ফি এবং অন্যান্য রাজস্ব আদায় করবে কর্তৃপক্ষ।
তীর্থযাত্রীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে নির্দিষ্ট পথ উল্লেখ থাকবে এবং সে পথেই চলাচল করতে হবে।
তীর্থযাত্রার জন্য ১৪ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং শুধু দিনের বেলায় নির্ধারিত নৌযান রুটে চলাচল করা যাবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না।
প্রতিটি নৌযানে লাইফ জ্যাকেট বা বয়া রাখা বাধ্যতামূলক করেছে বন বিভাগ। এছাড়া নৌযানের গায়ে সিরিয়াল নম্বর ও যাত্রী সংখ্যা উল্লেখ থাকতে হবে।
সুন্দরবনে প্রবেশের সময় তীর্থযাত্রীদের টিকেট বা টোকেন দেওয়া হবে যা সর্বদা সঙ্গে রাখতে হবে। প্রত্যেকটি নৌযানকে আলোরকোলে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট করতে হবে, নাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাসপূর্ণিমার সময় কোনো ধরনের বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র বা অবৈধ সামগ্রী বহন নিষিদ্ধ। এগুলোর পাশাপাশি হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, কুঠার, করাত ইত্যাদি পাওয়া গেলেও আইনি ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন পানির বোতল, প্লেট, গ্লাস, চামচ বহন করা যাবে না। এছাড়া মাইক বাজানো বা শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ।
তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বন বিভাগ বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে।
প্রতি বছর রাসমেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে সমবেত হন। তবে এ সময় হরিণ শিকারও বেড়ে যায়, যা বন বিভাগের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ২০২২ সাল থেকে রাসমেলায় হিন্দু সম্প্রদায় ব্যতীত অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল।