দ্বিতীয় ম্যাচ গোলশূন্য ড্র, সিরিজ বাংলাদেশের
শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মুহূর্ত বাকি তখন। এমন সময় নেপালের জোরালো আক্রমণ। ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বল জালের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন বদলি খেলোয়াড় নবযুগ শ্রেষ্ঠ। তেমন গতি না থাকলেও বল গ্লাভসবন্দী করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নিরবতা। কিন্তু বল গড়িয়ে গিয়ে ঠেকলো গোলপোস্টে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ।
মুজিব বর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ। ড্র করলেও জয়ের হাসি উঠেছে জামাল ভূঁইয়াদের মুখেই। প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে জিতে থাকায় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ বেশ কিছু আক্রমণ সাজিয়েও গোলের সন্ধান করতে পারেনি। অন্যদিকে নেপাল গোছালো ফুটবল খেললেও আদায় করে নিতে পারেনি কাঙিক্ষত গোল।
প্রথমার্ধের প্রথম কয়েক মিনিট ঢিমে তালে এগিয়েছে ম্যাচ। এ সময়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গোছালো ফুটবল খেলেছে নেপাল। বল দখলের লড়াইয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখে বাংলাদেশের রক্ষণভাগে হানা দিয়েছে সফরকারীরা। যদিও পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারেনি তারা। রক্ষণাত্মক ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ লম্বা পাসে গোলের সন্ধান করার চেষ্টা করছিল।
এভাবে ম্যাচের ২০ মিনিট পেরিয়ে যায়। ২৩তম মিনিটে গিয়ে প্রথম গোছালো আক্রমণ সাজায় বাংলাদেশ। ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিনের পাস থেকে বল পান সুমন রেজা। ডি-বক্সের বাইরে থেকেই শট নেন তিনি। কিন্তু সুমনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৭ মিনিটে নাবিব নেওয়াজ জীবন পাস দেন সাদকে। সাদ ক্রস করে বল পাঠান ডি-বক্সে। বাংলাদেশের কেউ পৌঁছানোর আগেই দলকে বিপদমুক্ত করেন নেপালের ডিফেন্ডার বিকাশ খাওয়াস।
দুটি আক্রমণ সাজিয়ে বাংলাদেশ যেন ছন্দ খুঁজে পায়। ৩১ মিনিটে সাদ উদ্দিন ডান পাশ থেকে বল নিয়ে নেপালের রক্ষণভাগে ঢুকে পাস দেন জীবনকে। জীবন বল বাড়ান সুমন রেজাকে। কিন্তু সুমনের নেওয়া দুর্বল শট সহজেই গ্লাভসবন্দী করেন নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বু।
দুই মিনিট পরে বাংলাদেশের আঙিনায় হানা দেয় নেপাল। কর্নারের বিনিময়ে নেপালের আক্রমণ ফেরায় বাংলাদেশ। দারুণ একটি কর্নারে শটে মাথা ছোঁয়ান অনন্ত তামাঙ। কিন্তু তার হেড জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। এরপর কয়েক মিনিট মাঝমাঠেই বল দখলের লড়াই করে দুই দল। ৪৩ মিনিটে সুযোগ পেলেও রহমতের দুর্বল শট বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারেনি। গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধেও খেলায় তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচের দ্বিতীয় অর্ধেও নেপাল গোছানো ফুটবল খেলতে থাকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো একইভাবে এই ম্যাচেও পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারেনি নিয়মিত ৪-৫ খেলোয়াড়কে ছাড়া ম্যাচ খেলতে নামা নেপাল।
এই সুযোগে গুছিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৪৮ মিনিটে রহমতের ক্রস থেকে ডি-বক্সের ভেতরে বল পান মানিক মোল্লা। কিন্তু তার দুর্বল শট প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে একাই অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে শট নেন বিশ্বনাথ ঘোষ। তার শট গোলবারের বেশ উপর দিয়ে চলে যায়।
৫৬ মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ সাজায় নেপাল। বাংলাদেশের ডি-বক্সেও ঢুকে পড়ে। কিন্তু অরক্ষিত ডি-বক্স পেয়েও গোল করতে পারেনি তারা। ৫৮ মিনিটে বাংলাদেশের পাল্টা আক্রমণ। জীবনের বাড়ানো বল পান মাহবুবুর রহমান সুফিল। তিনি পাস দেন ইয়াসিনকে। কিন্তু ইয়াসিন শট নেওয়ার আগেই নেপালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় দলকে বিপদমুক্ত করেন। ৬৮ মিনিটে নেপালের ডিফেন্ডার বিকাশ খাওয়াসের ভুলে বল পান জীবন। বাম প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকেও জালের ঠিকানা করে নিতে পারেননি তিনি।
৯২ মিনিটে গোল হজম করে বসেছিল বাংলাদেশ। একটি ক্রসে হেড করেন নবযুগ শ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ঝাঁপিয়ে পড়েও বল গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি। সৌভাগ্যবসত বল গিয়ে পোস্টে লাগে। ফিরে আসা বল ডি-বক্সের বাইরে পাঠিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন তপু বর্মণ।