মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উভেন গার্মেন্টস খাত
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়- সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় কমে গেলেও, নিটওয়্যার খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।
জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে পণ্য রপ্তানি ছিল ২২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ১ শতাংশ কম।
এটি সামান্য হলেও, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিক রপ্তানি দশমিক ৩৬ শতাংশ কম হওয়ার যে হার দেখা যায়, তার চেয়ে বেশি।
ডিসেম্বর থেকে টানা দুই মাস রপ্তানি আয় সঙ্কোচনের কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ; পোশাক খাতে উভেন গার্মেন্টসের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
পোশাক খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস উভেন গার্মেন্টস খাতে মহামারির প্রভাবে সার্বিক রপ্তানি কমে গেছে ১১ শতাংশ, এর প্রভাব পড়েছে নিটওয়্যার খাতেও। ফলে পোশাক খাতের মোট রপ্তানি আয় কমে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে তৈরি পোশাকের উভয় খাত- উভেন ও নিটের আয় ৮ শতাংশ বেড়ে ২৮৬ কোটি ডলার হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারিতে সার্বিক রপ্তানি আয় ৫ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার ছিল।
পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ইউরোপিয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশে কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পুনরায় লকডাউন জারি হওয়ায় রপ্তানি কমে গেছে।
রপ্তানির বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জব্বার বলেন, "পুনরায় লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ ইউরোপীয় ক্রেতা তাদের অর্ডার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন, অনেকেই উৎপাদনের সময় পেছানোর অনুরোধ করেছেন।"
এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। আগামী দুই- তিন মাসও এই অবস্থা বজায় থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ কয়েক মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন। ফলে পরবর্তী দুই- তিন মাসের মধ্যে মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে।"
তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামে মজুদকৃত অবিক্রিত পণ্য পরবর্তী সময়ে রপ্তানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
"অর্ডারের অভাবে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত ইউনিটগুলোর উৎপাদন কাজ চালু রাখতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি," যোগ করেন এসএম খালেদ। একইসঙ্গে, রপ্তানি বাজারগুলোয় রিটেইলার ব্র্যান্ডগুলোর বিপণীকেন্দ্র সচল হলে অবস্থার উন্নতি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হোম টেক্সটাইল ও পাটের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল সন্তোষজনক; ৪৪ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ। ইপিবি'র প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত সাত মাসে বিছানা, কিচেন-টয়লেট লাইনের হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল মোট রপ্তানি আয়ের ৩ শতাংশের কম।
একইসময় পাট, সুতা, পাটজাত পণ্য, কার্পেট ও হাতে তৈরি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ - ৪৮ শতাংশ। তবে এসব পণ্য বাণিজ্য বেশি না হওয়ায়, সার্বিক রপ্তানি পারফরমেন্স উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা যোগ করতে পারেনি।
প্রকৌশল, রাসায়নিক এবং ওষুধ শিল্পে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও হিমায়িত খাদ্য, চামড়া, কৃষি এবং প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক।