চলতি সপ্তাহেই ভারত থেকে আসতে পারে আরও ভ্যাকসিন, প্রথম ডোজ দেওয়া অব্যাহত থাকবে
চলতি সপ্তাহেই ভারত থেকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায় প্রথম ডোজের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ প্রতিষেধক দেওয়াও অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভারত বাংলাদেশকে এখন কি পরিমাণ ভ্যাকসিন দেবে, তা চূড়ান্ত না হলেও চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মতো প্রতিষেধক পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'ইনশাল্লাহ, এই সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আমরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের আরেকটি চালান পাব।'
কি পরিমাণ ভ্যাকসিন এই সপ্তাহে আসবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও পরিমাণ নির্ধারণ হয়নি। তবে বাংলাদেশ যাতে প্রথম ডোজ দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারে, সে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে ভারত সরকার ও সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
এদিকে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে, রোববার রাত ৮টা নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে ৭,০৮৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৫৩ জন।
আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দেশে করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে। দ্বিতীয় ভ্যাকসিন দেয়ার পাশাপাশি প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, "দেশে কবে ভ্যাকসিন আসবে তার নির্দিষ্ট তারিখ জানিনা, আমরা আমাদের দিক থেকে সব ধরনের চেষ্টা করছি। আশা করি, ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া চলমান থাকবে।"
বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেশব্যাপী দেওয়া হচ্ছে। এপর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে, প্রতিমাসে বাংলাদেশ সরকারের ৫০ লাখ ডোজ করে প্রতিষেধকটি পাওয়ার কথা ছিল। চুক্তির আওতায় এপর্যন্ত আসা দুটি চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান ঢাকায় আসে। তার আগে ২০ লাখ ডোজের আরেকতি চালান গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয় ভারত সরকার।
আর চুক্তির আওতায় সেরামের কাছ থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০ লাখ ডোজের দ্বিতীয় চালান পায় বাংলাদেশ। এছাড়া, গত ২৬ মার্চ ভারতের উপহার দেওয়া ১২ লাখ ডোজের আরেকটি চালান ঢাকায় আসে।
চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিনের তৃতীয় চালান মার্চে না আসায় সেকেন্ড ডোজের ভ্যাকসিন সংকট হতে পারে- তাই ৫ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছিলো। তবে এখন সে শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে ভ্যাকসিনের অন্য উৎসেরও সন্ধান করছে সরকার। এর আগে চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি বাংলাদেশে টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন টিকার সংকটের মুখে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
১৫ মার্চ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ মাসুদূর রহমান মোল্লা চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনকর্তৃক উৎপাদিত ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়ে চীনা দূতাবাসকে অনুরোধ জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন।
দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ৭,০৮৭ জনে উন্নীত:
দেশব্যাপী শুরু হতে চলা লকডাউনের আগের দিন রোববার অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে বাংলাদেশ। এদিন ২৪ ঘনটায় সংক্রমিত শনাক্ত হন ৭,০৮৭ জন। দেশে মহামারি হানা দেওয়ার পর এটিই দৈনিক সর্বোচ্চ কেস সংখ্যা।
নতুন এই রেকর্ডে সংক্রমণ হার উন্নীত হয়েছে ২৩.০৭ শতাংশে। আর এপর্যন্ত শনাক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬,৩৭,৩৬৪ জনে। সার্বিক সংক্রমণ হার ১৩.৩২ শতাংশ বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া রোববার মারা গেছেন ৫২ জন, এতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২৬৬, সার্বিক মৃত্যু হার ১.৪৫ শতাংশ।
মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের দিক থেকে যতটুকু সম্ভব বিশেষ পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বেশ কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু, সবকিছুর মূল কথা হলো আমাদের নাগরিকদের তা মেনে চলতে হবে। মেনে না চললে আমরা যাই করিনা কেন করোনা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তাই সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।