একসময় উত্তর মেরুও দাপিয়ে বেড়াত ডাইনোসরেরা!
ডাইনোসর শব্দটা শুনলে আমাদের চোখে কেমন ছবি ভাসে? জুরাসিক যুগে ঘন সবুজ বনে কিংবা বৃক্ষহীন বিস্তীর্ণ তৃণভূমি দাবড়ে বেড়াচ্ছে একপাল দানবীয় জন্তু।
প্রায় সব ছবি কিংবা চলচ্চিত্রেই অতিকায় জন্তুটিকে এমন পরিবেশে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
কিন্তু এমন পরিবেশের বাইরে, এককালে মেরু অঞ্চল ছিল, এমন এলাকায়ও যে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে, সে কথা আমরা ক'জন জানি?
সম্প্রতি আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্যাট্রিক ড্রুকেনমিলার একটি বাচ্চা ডাইনোসরের শরীর ও দাঁতের কিছু হাড় আবিষ্কার করেছেন। এই হাড়গুলো থেকে জানা গেছে যে, কিছু ডাইনোসর আর্কটিকের স্থানীয় বাসিন্দা ছিল।
তবে দেহাবশেষ পাওয়া ডাইনোসরগুলো সে অঞ্চলে গ্রীষ্ম কাটাতে গেছিল নাকি ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা, তা নিয়ে অবশ্য এখনও বিতর্ক রয়েছে।
আধুনিককালে যেসব প্রাণী মেরু অঞ্চলে অভিবাসী হয়, সেগুলো প্রায়ই ওই অঞ্চলে বাচ্চা জন্ম দেয়। বিশেষ করে পাখিরা এই কাজ করে বেশি। তবে এদের ডিম তাড়াতাড়ি ফোটে। বাচ্চারাও খুব দ্রুত উড়তে শিখে শীত আসার আগে গরম অঞ্চলে চলে যায়।
ফসিল হয়ে যাওয়া ডাইনোসরের ভ্রূণ থেকে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, ডাইনোসরের ডিম ফুটতে কমপক্ষে ছয়-সাত মাস সময় লাগত। তাই জীবাশ্মবিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, অতীতে মেরু ছিল, এমন অঞ্চলে ডাইনোসরের ছানা বা ডিমের ফসিল পাওয়ার অর্থ একটাই। ডাইনোসরগুলো ওই অঞ্চলে গ্রীষ্ম কাটাতে যায়নি—ওখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিল।
এখন পর্যন্ত অবশ্য কেবল উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার কাকানাউত-এ মেরু অঞ্চলের ডাইনোসরের ডিম পাওয়া গেছে। কাকানাউত একসময় আর্কটিক সার্কেলের অংশ ছিল।
ড. ড্রুকেনমিলারের আবিষ্কৃত মেরু-ডাইনোসরের ফসিলগুলো উত্তর আলাস্কার প্রিন্স ক্রিক ফরমেশন-এর। ৭০ মিলিয়ন বছর আগে এই অঞ্চলটি উত্তর মেরু থেকে মাত্র ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশ দূরে অবস্থিত ছিল।
ফসিলগুলো বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের। এগুলোর মধ্যে আছে শিংওয়ালা সিরাটোপসিয়ান, হাঁসের চঞ্চুর মতো মুখওয়ালা হ্যাড্রোসর, টাইর্যানোসরাস প্রজাতির বড় মাংসাশী ডাইনোসর। এমনকি ভেলোসির্যাপটর প্রজাতির ছোট ডাইনোসরের ফসিলও আছে এসবের মধ্যে। এ থেকে বোঝা যায়, এ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় ছিল। যদিও প্রিন্স ক্রিক বছরে ১২০ দিন অন্ধকার থাকত। এখানকার গড় তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মানে, শীতকালে প্রিন্স ক্রিকে তুষার পড়ত।
ড. ড্রুকেনমিলারের অনুমান, এত ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যেও জন্তুগুলোর টিকে থাকার কারণ এদের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ রক্ত। এছাড়াও শরীরের কোমল পালকও ডাইনোসরগুলোকে ঠান্ডার হাত থেকে অনেকটা সুরক্ষা দিয়েছে বলে অনুমান তার। আলাস্কায় পাওয়া ডাইনোসরগুলোর দেহে পালক ছিল, এমন কোনো সরাসরি প্রমাণ ফসিলগুলো থেকে পাওয়া যায়নি। তবে অন্য অঞ্চলে পাওয়া ডাইনোসরগুলোর শরীর যেহেতু পালকে ঢাকা ছিল, তাই আলাস্কার ডাইনোসরের গায়েও পালক থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
- সূত্র: দি ইকোনমিস্ট