সিলিন্ডার গ্যাসের দাম এক লাফে বেড়েছে ৫৫০ টাকা
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থানে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম সাড়ে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, শীতপ্রধান দেশগুলোতে কাঁচামালের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বেসরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোর সমিতির নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাসের এ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ করে সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে রান্নাঘর থেকে সবখানে। এ সুযোগে অন্য জিনিসের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: গ্রাহক পর্যায়ে সিলিন্ডারের এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা করে। দুই মাস আগেও এর দাম ছিল ৮৫০ টাকা করে। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে ১৩ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত।
গত নভেম্বরে ১৩ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের এলপি গ্যাস দাম ছিল খুচরা পর্যায়ে ৭৫০-৮০০ টাকা করে। গ্রাহক পর্যায়ে কোয়ালিটি ভেদে তা ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
সরকারি এলপি সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বেক্সিমকো গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাসের দামের মধ্যে তারতম্য রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে একই ওজনের টোটাল গ্যাসের দাম বর্তমানে ৯৫০ টাকা করে।
এ প্রসঙ্গে রাউজানের গহিরা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী বাবলু চৌধুরী বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দুই মাস আগেও আমরা গ্রাহকদের কাছে ১৩ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার ৭০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়। নিয়মিত দর ওঠানামার কারণেও ক্রেতারাও দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, আমারা দুই মাস আগেও ৮৫০টাকা করে ১৩ কেজি ওজনের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছি। কিন্তু তা হঠাৎ করে এখন ১০৫০ টাকা করে নিচ্ছে। কী কারণে এ দাম বাড়ছে তা বুঝতে পারছি না।
খুলনা: গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত কোম্পানি নির্ধারিত ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ছিল ৯০০ টাকা। নতুন বছরে কোম্পানি এটির মূল্য বাড়িয়ে ১০৫০ টাকা করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দোকানে খুচরা মূল্যে এই গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। হোটেলে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ৩০ কেজি ওজনের গ্যাস ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যে। গত ১ জানুয়ারি হতে কোম্পানি থেকে ডিলাররা এই গ্যাস কিনছেন ২ হাজার ৫৫০ টাকা মূল্যে। বর্তমানে বাজারে খুচরা মূল্যে এটি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যে। এছাড়া ৩৫ কেজি ওজনের গ্যাস ২ হাজার ৬০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ৪৫ কেজি ওজনের গ্যাস এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।
হঠাৎ করেই এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতারা।
নগরীর শেখপাড়া মেইন রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরে ১২ কেজি ওজনের গ্যাস কিনেছি ৯০০ টাকা মূল্যে। নতুন বছরের শুরুতে সেই গ্যাস কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
তিনি বলেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তার ওপর গ্যাসের দাম এভাবে বাড়লে আমাদের মতো গরীব মানুষরা কিভাবে বাঁচবে?
খুলনা জেলা এলপি গ্যাস ডিলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শায়ের আহম্মেদ বিটু বলেন, শীতকালে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে অধিক মূল্যে গ্যাস কিনতে হচ্ছে। সে কারণে কোম্পানিগুলোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে গ্যামের দাম আবার কমে যাবে।
রাজশাহী: নগরীতে বেড়েছে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের দাম। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডার প্রতি ১৫০ টাকা করে বেড়েছে এই গ্যাসের দাম। এর ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী।
তারা বলছেন, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি ছাড়াই এভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তাদের জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যমুনা ও লাফসের বিক্রয় প্রতিনিধি রাকিব সরকার রিমন জানান, ১ জানুয়ারি থেকে দাম বেড়েছে। পরদিন থেকে আমরা তা কার্যকর করেছি।
শনিবার রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ডিলার ও রিটেইলাররা জানান, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা, দোকানে ব্যবহৃত ৩৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকা আর বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ছোট সাড়ে ৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা।
রাজশাহী নগরীর রেলগেটে ওমেরা গ্যাসের ডিলার আনন্দ কুমার সাহা জানান, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ১৫০ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়া দোকানে ব্যবহৃত সব সিলিন্ডারের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মাসে তার ৫ হাজার সিলিন্ডারের চাহিদা হয় বলে জানান তিনি।