গণটিকাদান কর্মসূচীর প্রথম দিন: বিপুল জনসমাগম ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন
শনিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে দেশব্যাপী চলছে গণটিকা কার্যক্রমের প্রথম দিন।
এই ক্যাম্পেইনের ছয় দিনে পর্যায়ক্রমে ৩২ লাখ মানুষকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে।
গণটিকাদান কর্মসূচীর প্রথম দিনে বুথগুলোতে টিকা নিতে আসা লোকজনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়; এ সময় তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায় নি। বরং ভিড়ের মধ্যে করোনা বিস্তারের আশঙ্কাই তীব্র হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর ২৮ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিতে। এখানে টিকা নিতে আসা ডলি বেগম বলেন, "সকাল ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও টিকা দিতে পারিনি"।
ফাতেমা আক্তার নামক টিকাগ্রহীতা আরেক নারী বলেন, "সকাল ৯টার দিকে এসেছি। ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে দিতে পেরেছি টিকা। এত মানুষের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন নিতে এসে উল্টো করোনায় আক্রান্ত হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি"।
মো. বজলুর রহমান বলেন, "সকাল সাড়ে আটটায় এসেছি, সিরিয়ালে ছিলাম তাও টিকা দিতে পারিনি। একটার সময় বলে, টিকা শেষ বাড়িতে চলে যান"।
কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক আবির বলেন, "আমরা চেষ্টা করেছি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা প্রদান করতে, কিন্তু মানুষ তা মানছে না"।
নূরজাহান রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ নং ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্রে কাউন্সিলর নিজ উদ্যোগে টিকা গ্রহণকারীদের জন্য পানি ও জুসের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া স্কুল মাঠে টিকা নিতে আসা লোকদের প্যান্ডেল করে বসার ব্যবস্থা করেছেন।
৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, "আমরা এখানে ৩৫০ জন লোককে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। এর বাইরে লোকজনকে আগামীকাল আসার জন্য বলেছি। যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের জন্য পানি, জুসের ব্যবস্থা রেখেছি আমার পক্ষ থেকে"।
এখানে টিকা নিতে আসা লিপি আক্তার বলেন, "আমি সকাল ৮টায় এসেছি। এখনও বসে আছি। ৪ জন করে টিকা দিচ্ছে। এখানকার ব্যবস্থাপনা ভালো লেগেছে। বসার জন্য ব্যবস্থা করায় তেমন কষ্ট হচ্ছে না"৷
তবে মানুষ বেশি হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল সেখানে।
এ প্রসঙ্গে টিকা নিতে আসা অভি আহমেদ বলেন, "এখানকার ব্যবস্থাপনা ভালো লেগেছে তবে আমাদের সবাইকে বসিয়ে রেখে কার্যক্রম বন্ধ রেখে ভোগান্তি দেওয়ায় ভালো লাগেনি"।
ডিএনসিসির ২৭ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩০০ জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশই টিকা দিতে না পেরে চলে গিয়েছেন। এছাড়া লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল না সামাজিক দূরত্বের বালাই।
ডিএনসিসির (অঞ্চল ৫) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন বলেন, "আমাদের এ কেন্দ্রে ৩০০ টিকা বরাদ্দ। যারা আজকে দিতে পারেনি তাদেরকে আগামীকাল নিতে আসতে বলে দেওয়া হচ্ছে"।
করোনা টিকা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান তাদের অনেকেই সকাল ৮টার আগে এসেছেন। তবে সাড়ে নয়টার পরে এসে অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে।
হেলেনা বেগম, স্মৃতি আক্তার, বেদানা বেগম মিরপুর আগারগাঁও থেকে রিকশায় করে এসেছেন। এসে শুনেন, 'আজকে আর টিকা দেওয়া হবে না'।
স্মৃতি আক্তার বলেন, "১০০ টাকা খরচ করে টিকা দিতে এসেছি, এখন বলে আগামীকাল আসতে। এসে দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম"।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোট উৎসবের আমেজে গণটিকাদান
সকাল ৯টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকাল ৭টা থেকেই মানুষজন কেন্দ্রে এসে ভিড় জমাতে থাকেন। প্রতিটি টিকাকেন্দ্রেই মানুষজনের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে টিকার জন্য নারীদের আগ্রহ বেশি। কেউ কেউ দুই ঘণ্টা, কেউ আবার তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর পাচ্ছেন বহুল কাঙ্ক্ষিত করোনার টিকা।
সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পাইকপাড়া এলাকার হুমায়ূন কবির পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নেন ৭৮ বছর বয়সী সুনীতি রায়। ছেলে বাদল রায়ের সঙ্গে টিকা কেন্দ্রে আসেন তিনি। টিকা নেওয়ার পর আনন্দ প্রকাশ করেন এই প্রৌঢ়া।
সুনীতি রায়ের ছেলে বাদল রায় বলেন, "মায়ের বয়স বেশি হওয়ায় প্রথম দিকে টিকা দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বাড়ির লোকজন টিকায় সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে টিকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মা-ও চাইছে টিকা নেওয়ার জন্য। সেজন্য গণটিকাদান ক্যাম্পেইনে এসে টিকা দিয়েছি মাকে"।
গণটিকাদান ক্যাম্পেইনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ইউনিয়ন ও পৌরসভার এলাকাগুলোতে ১১০টি অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র করা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোতে বুথ রয়েছে ৩০৬টি। বুথগুলো থেকে আজকে ৬১ হাজার ২০০ জনকে করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া গণটিকাদান ক্যাম্পেইন বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে। আগে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারাই আজকে টিকার প্রথম ডোজ নিতে পারবেন।
বাগেরহাটে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আসছেন টিকাগ্রহীতারা
বাগেরহাটে একযোগে শুরু হয়েছে ৭৮টি কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচী। সকালে জেলার ৯ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ও মোংলা পৌরসভায় করোনা টিকা প্রদান করা হয়েছে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা বয়সী মানুষ টিকা নিতে আসছেন। আফসারা বেগম বলেন, "সরকার বাড়ির দোরগোড়ায় করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু করায় আমাদের উপকার হয়েছে। সকালে নিরিবিলি পরিবেশে টিকা নিয়েছি। আগে হাসপাতালে যেয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দিতে হচ্ছিল"।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, "জেলার ৭৮টি কেন্দ্রে আমরা ৪৫ হাজার মানুষকে টিকা প্রদান করব। তবে যদি কোন কেন্দ্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি টিকা গ্রহীতা আসেন, তাদেরকেও দেওয়ার জন্য আমাদের টিকার মজুদ রয়েছে। এজন্য ৪৫ হাজার টিকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমরা ৬০ হাজার ৮০০ সিনোফার্মার টিকা মজুদ রেখেছি"।