জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য বাড়াতে পারে সরকারি ভর্তুকি ও বিদ্যুৎ বিলের খরচ
বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে, সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ বাড়বে অথবা ভোক্তাদের জন্য বাড়বে বিদ্যুতের দাম।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম যদি এমন অস্থিতিশীলই থাকে, তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ।
আমদানি খরচ এবং আয়ের মধ্যে ঘাটতি কমাতে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গতকাল এক বৈঠকে ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল; লক্ষ্য ছিল ক্ষতি কমানোয় সর্বনিম্ন একটি মূল্য নির্ধারণ করা।
সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার করপোরেশনের আরেকটি সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
জ্বালানির দাম আরও বৃদ্ধি পেলে, বিদ্যুতের দামও আরও বাড়বে।
কিন্তু, সরকার বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
২০১৯ সালের সর্বশেষ গ্যাস ট্যারিফ আদেশ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, পরিবহন, আমদানি এবং বিক্রয়কারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ৯.১৫ ডলারে আমদানি করা হলে ভর্তুকিতে প্রয়োজন হবে ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
তবে পেট্রোবাংলার অর্থনৈতিক বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির প্রয়োজন হবে, কারণ করপোরেশন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ আমদানিতে খরচ করছে ২৯ থেকে ৩০ ডলার।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেট্রোবাংলা এলএনজি ভর্তুকি হিসেবে ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পেয়েছে।
বিপিডিবি -তে সর্বকালের সর্বোচ্চ ঘাটতি
গ্যাসের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে প্রাকৃতিক খনিজের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ব্যয়বহুল তেলচালিত কারখানার ওপর তার নির্ভরতা বাড়িয়েছে।
দৈনন্দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপিডিবি'র গ্যাসভিত্তিক সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ১৪০০ এমএমসিএফ গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
তবে এখন, সংস্থাটি কেবল ১১০০ থেকে ১১৫০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রাখে। ফলে দেশের একমাত্র এই বিদ্যুৎ ক্রেতাকে ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক প্লান্টগুলো প্রোডাকশন লাইনে আনতে হয়েছে, যা ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
গ্যাস ভিত্তিক প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি গড়ে দেড় টাকা, যেখানে তেল ভিত্তিক প্ল্যান্টে একই পরিমাণ বিদ্যুতের জন্য খরচ হয় সাড়ে আট টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিডিবি ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছিল বলে জানিয়েছে সংস্থার একটি সূত্র। তবে এ বছর, বাজেট সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বিপিডিবি'র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ও আয়ের মধ্যে তারা বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়বেন।
তিনি বলেন, "জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আগে, আমরা আমাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করতাম। সেই ঘাটতি পূরণ হতো সরকারের দেওয়া ভর্তুকির মধ্যমে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনের খরচ এবং আয়ের মধ্যে ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পাবে,"
তিনি আরও বলেন, "সরকার যদি ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে চায়, তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতে পারে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।"
জ্বালানির দাম বাড়ানোর দিকে নজর বিপিসি'র
ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম চলতি বছর ৫০ শতাংশ বেড়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত পৌঁছেছে ৮০.৭৫ ডলারে, যা বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ৬৯ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেলেই ক্ষতির শিকার হয় জ্বালানি আমদানি ও বিতরণকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বিপিসি।
গেলো সেপ্টেম্বরে বিপিসি প্রতি ব্যারেল ডিজেল ৮৭.১২ ডলারে এবং ৪৮৫.০৯ ডলারে প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করেছে।
আকস্মিক এই দাম বৃদ্ধির কারণে, বিপিসি গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন ১৩ কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ফার্নেস অয়েলের প্রতি লিটারে ৫ টাকা এবং প্রতি লিটার ডিজেলে ৭ থেকে ৮ টাকা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল ৫৩ টাকায় এবং ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
বিপিসি'র পরিচালনা ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক সৈয়দ মেহেদী হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বৈশ্বিক দামের সঙ্গে ডিজেলের মূল্য সমন্বয় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।"