প্রণোদনার প্রশংসা করলেও আরও নীতি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা করোনার প্রভাব মোকাবিলায় বেসরকারি খাত ও অর্থনীতিতে নতুন করে জীবনী সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে কোভিড পরবর্তী বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তার পাশাপাশি বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নীতি নির্ধারকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তারা।
'করোনাকালীন শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনার ভূমিকা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি তারা এসব কথা বলেন।
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ খুব সহজে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে পারায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন বক্তারা।
বুধবার সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সভায় বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এবং স্টার্লিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস-চেয়্যারমান ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং এফএফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান ৮৬ শতাংশের বেশি। বেসরকারি খাতকে নানা নীতি-সহায়তা দিয়ে সচল রাখলে অর্থনীতিও সচল থাকবে।
মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। তার গতিশীল সিদ্ধান্তের কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের অর্থনীতি ক্ষতিতে পড়েনি বলেও জানান তারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, "করোনার সময় ব্যবসায়ীদের সহায়ক হয়, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন।"
মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ জীবনী শক্তি সঞ্চারক হিসাবে করেছে উল্লেখ করে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, "করোনা নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। ব্যবসায়ীদের যেসব সমস্যা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেছি"।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীরা না বললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যাতে শিল্পখাত উপকৃত হওয়ার সঙ্গে অর্থনীতিও উপকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, "ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সময় সমস্যা পড়ি। আমরা শান্তিতে ব্যবসা করতে চায়। এই জন্য সরকারের নানান নীতি সহায়তা প্রয়োজন। গাজীপুরে বেশির ভাগ শিল্প-কারখানা হলেও রাস্তার বেহাল দশার কারণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুততার সাথে এসব কাজ শেষ করতে হবে।"
শেখ ফজলে ফাহিম করোনার সময় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া নানান পদক্ষেপ, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা ও প্রণোদনা ঘোষণার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "বেসরকারি খাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের নীতিতে যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করতে হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, "প্রধানমন্ত্রী ব্যবসাবান্ধব। করোনার সময় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে মহামারি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর কিছু চ্যালেঞ্জের সাথে সুবিধাও আছে।"
তিনি বলেন, "সরকারের প্রণোদনা বেসরকারি খাতের জন্য খুবই ভালো হয়েছে, সেটা না পেলে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতাম না । অনেক শিল্প-কারখানা বসে যেতো। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত অনেক কম হলেও, সেটা বাড়াতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না এনবিআর"।
তিনি বলেন, "ইকোনোমিক জোনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে পলিসি প্রণয়ন করছে সরকার। কিন্তু বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না।"
আগামী বছর চার মেগা প্রকল্প উপহার
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে অবকাঠামো খাতে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সচল হলে দেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, "আগামী বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে। আর এই পদ্মা সেতুসহ মেট্রোরেল, এমআরটি লাইন ও বাস র্যাপিড ট্রানজিট মেগা প্রকল্প চালু হবে।"
ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, "ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করার বিরুদ্ধে আমি। আর রাজনীতিতে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে যারা ব্যবসা করে, তাদেরকে আমি ঘৃণা করি।"