জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে চাষ হচ্ছে না শসা: হুমকিতে ব্রিটেনের খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আঁচ লেগেছে ব্রিটেনের শসার বাজারেও। উচ্চমূল্যের কারণে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গ্লাসহাউসগুলোতে উত্তাপের ব্যবস্থা করতে পারছেন না কৃষকেরা। ফলে শসা ফলাতে পারছেন না তারা।
এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে গিয়েছিল একদফায়। তারপর রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার জেরে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম এক লাফে আরেক দফা বাড়ে সম্প্রতি। এর ফলে ব্রিটেনের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষিরা মরিচ, বেগুন ও টমেটোর চাষ করতে পারছেন না।
যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া ভীষণ ঠান্ডা। এ কারণে এ আবহাওয়ায় সেখানকার কৃষকদের গ্যাসের প্রয়োজন বেশি। গ্যাসের উত্তাপে তারা গ্লাসহাউসে বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। কিন্তু সেই গ্যাসের সরবরাহই ব্যাহত হওয়ায় ব্যাহত হতে চাষবাস।
এই ধাক্কা লাগতে পারে ব্রিটেনের খাবারের মূল্যে। এর জেরে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির এই সময়ে আরও বেড়ে যেতে পারে খাবারের দাম। সেইসঙ্গে ব্রিটিশদের স্যান্ডউইচ বানানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ শসারও ঘাটতি দেখা দিতে পারে উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্ট ও লন্ডনের বড় হোটেলগুলোতে।
গত বছর ব্রিটেনে একটি শসার উৎপাদন খরচ ছিল ২৫ পেন্স। চলতি বছর এ খরচ প্রায় ৭০ পেঞ্চ ছুঁয়েছে, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার ব্রিটেনের বৃহত্তম সুপারমার্কেট চেইনগুলোতে নিয়মিত আকারের শসা বিক্রি হচ্ছিল ৪৩ পেন্সে।
৫৪ বছর ধরে শসা ফলায় লা ভ্যালির রয়ডনের টনি মন্টালব্যানোর পরিবার। ফাঁকা গ্লাসহাউসের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি রয়টার্সকে বলছিলেন, 'গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামই বড় চিন্তার কারণ। বহু বছরের পরিশ্রমে আমরা এ অবস্থানে পৌঁছেছি। কিন্তু এই একটা বছরই আমাদের একেবারে ধ্বংস করে দিতে পারে।'
৩০ হাজার বর্গফুটের গ্লাসহাউস রয়েছে টনির। সেখানে ফলানো শসা পাঠান বিভিন্ন সুপারমার্কেট গ্রুপে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার পুরো ৩০ হাজার বর্গফুটের গ্লাসহাউসই শূন্য।
বছরে তিনটি চক্রে শসা ফলান টনি। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বছরের প্রথম চক্রে—জানুয়ারিতে—শসার চারা রোপণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
গত বছর প্রতি থার্ম প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য তিনি ৪০-৫০ পেন্স দাম দিয়েছেন। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রতি থার্ম প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ছিল ২.২৫ পাউন্ড।
টনির মতো আরও অনেকেই শসা ফলাচ্ছেন না এবার। আর ছাড়া ফলাচ্ছেন, তারাও কম উত্তাপ ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাতে একদিকে উৎপাদন যেমন কমে গেছে, অন্যদিকে বেড়ে গেছে রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও।
এছাড়া গত বছর সারের দামও গেছে বেড়ে।
ফলে সব মিলিয়ে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। এতে হুমকিতে পড়ে গেছে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা।
এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের সহায়তা দাবি করছেন অনেক কৃষক। গ্যাসের ওপর থেকে কর তুলে নেওয়ার জন্য তদবির করছেন তারা। কিন্তু কর তুলে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটির অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক কিছুই বলেননি।
ফেব্রুয়ারিতে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়ে যায় যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি (৬.২ শতাংশ)। পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি হয়ে যাবে ৯ শতাংশ। তার জেরে ১৯৫০-এর দশকের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে জীবনযাত্রার মান।
- সূত্র: রয়টার্স