১০০ বছরে পা রাখলো ইতিহাসের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কুকুর হাচিকো
'যত সময়ই লাগুক না কেন, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো'- এটাই ছিল চীনা সিনেমাটির পোস্টারের ট্যাগলাইন। ইতিহাসের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত কুকুর হিসেবে পরিচিত হাচিকোর গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। আর এবছর হাচিকো শতবর্ষে পা রাখতে যাচ্ছে, খবর বিবিসির।
মনিব মারা যাওয়ার পরেও জাপানের একটি ট্রেন স্টেশনে বসে বছরের পর বছর ধরে তার জন্য অপেক্ষা করে গেছে হাচিকো। নিজের কাজের মাধ্যমে অমর হয়ে রয়েছে সে। আকিতা ইনু প্রজাতির এই কুকুরটির কথা উঠে এসেছে উপন্যাস থেকে শুরু করে সিনেমা এবং সায়েন্স ফিকশন সিটকম ফুতুরামা'তেও।
১৯৮৭ সালে জাপানি ভার্সন এবং ২০০৯ সালের চলচ্চিত্র 'হাচিকো: আ ডগ'স টেল', দুটিই বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা পায়। এরপরে মুক্তি পায় চীনা সংস্করণ।
ইতিহাসের পাতায় আরও অনেক বিশ্বস্ত কুকুরের নাম পাওয়া যায়; যেমন- গ্রেফ্রায়ারস ববি, কিন্তু কেউই হাচিকোর মতো বিশ্বব্যাপী এমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
১৯৪৮ সাল থেকেই টোকিওর শিবুয়া স্টেশনের সামনে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে হাচিকোর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি। এই স্টেশনেই মনিবের জন্য টানা ১০ বছর অপেক্ষা করে গেছে হাচিকো।
প্রাথমিকভাবে ১৯৩৪ সালে ব্রোঞ্জের মূর্তিটি নির্মাণ করা হয়। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি রিসাইকেল করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
জাপানে স্কুলের শিশুদের ভক্তি ও বিশ্বস্ততার শিক্ষা দিতে হাচিকোর উদাহরণ দেওয়া হয়।
হাচিকোর 'প্রশ্নাতীত ভক্তি' একজন 'আদর্শ জাপানি নাগরিক' এর প্রতিফলন, বলেন ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই এর অধ্যাপক ক্রিস্টিন ইয়ানো।
হাচিকোর জন্ম ১৯২৩ সালের নভেম্বরে জাপানের ওদাতে শহরের আকিতা প্রিফেকচারে, যেটি আকিতা প্রজাতির কুকুরের আদি জন্মস্থান।
বড় আকারের আকিতা কুকুর জাপানের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্রজাতির কুকুর।১৯৩১ সালে জাপান সরকার এই প্রজাতির কুকুরকে জাতীয় আইকন মনোনীত করার আগপর্যন্ত বুনো শূকর ও এলক জাতীয় প্রাণীদের তাড়া করতে এই কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
হাচিকোকে নিয়ে ইংরেজি ভাষায় শিশুতোষ বইয়ের লেখক ইয়েতসু সাকুরাবা বলেন, "আকিতা প্রজাতির কুকুররা শান্ত, নিবেদিত, বুদ্ধিমান, সাহসী এবং প্রভুর প্রতি অনুগত ধরনের হয়ে থাকে। অন্যদিকে, এদের মধ্যে এক ধরনের একগুয়ে মনোভাবও থাকে এবং এরা নিজের প্রভু বাদে অন্য লোকজনের কাছ থেকে সাবধান থাকে।"
যেবছর হাচিকোর জন্ম হয়, একজন কৃষি অধ্যাপক এবং কুকুরপ্রেমী হিদেসাবুরো উয়েনো তার এক শিক্ষার্থীকে বলেন আকিতা প্রজাতির একটি কুকুর এনে দিতে।
দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণের পর কুকুরছানাটি ১৯২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি শিবুয়া জেলায় অধ্যাপক উয়েনোর বাসভবনে এসে পৌঁছায়। সেখানে আসার পর প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল কুকুরছানাটি মারা গেছে।
হাচিকোর বায়োগ্রাফারের ভাষ্যমতে, অধ্যাপক মায়ুমি ইতোহ, উয়েনো এবং তার স্ত্রী পরবর্তী ছয় মাস হাচিকোর সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন।
উয়েনোই কুকুরছানাটির নাম দেন হাচি, জাপানি ভাষায় যার অর্থ 'আট'। আর 'কো' যুক্ত করেন উয়েনোর শিক্ষার্থীরা।