সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্প পার্ক: ১৩ বছরে শেষ হয়নি কাজ, আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব
সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্প পার্কের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। চার বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়ানো পর এখনো তা প্রস্তুত হয়নি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আবার একটি সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্প শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাঠামোর কাজের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ বলে জানা গেছে।
প্রকল্পে নিয়োজিত বিসিকের অফিস সহকারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ঠিকাদারদের কারণে কাজটি এমন বিলম্বিত হয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, শুধু ড্রেন নির্মাণে ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে শিল্প পার্কের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জাফর বায়েজিদ বলেন, 'সর্বমোট ১৩টি ঠিকাদার এই প্রকল্পে নিয়োজিত আছে। কিন্তু তাদের অনেকেই ঠিকমতো কাজ করছে না। তাদের একজনের দায়িত্ব ছিল লেক-ড্রেন নির্মাণের। মূলত এই ঠিকাদারের কারণেই প্রকল্পটি অনেকটা বিলম্বিত হয়েছে।
তিনি বলেন, 'যে ঠিকাদারকে ড্রেনের কাজ দেওয়া হয়েছিল, তারা কাজটি করতে পারেনি। তাদের অনেকবার বলা হয়েছে। বেশ কিছু চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তার প্রমাণও আছে। কাজে গাফিলতির কারণে ঠিকাদারকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিসিক চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত।
সংশোধিত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে, পার্কটি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে সিরাজগঞ্জসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর তীরে শিল্প পার্কটি নির্মাণ করছে বিসিক।
শিল্প পার্কটিতে ৮২৯টি প্লটে ৫৭০টি কারখানা স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৮.৯২ কোটি টাকা।
বিসিক কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটি শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা সহ বিভিন্ন সংকটের কারণে নির্ধারিত ২০১৪ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। তারপর সময়সীমা ২০১৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয় এবং খরচ বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯.৯৬ কোটি টাকা।
সহকারী প্রকৌশলী হিরন্ময় বর্ধন জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণ পর্বের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তির কারণে প্রকল্পটি আরও একবার গতি হারিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত প্রকল্প স্থগিত করতে হয়েছিল।
প্রকল্পের প্রস্তাবটিে এরপর পুনরায় সংশোধন করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ব্যয় নির্ধারিত হয় ৬২৮.১০ কোটি টাকা।
আবার নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দেয় এবং সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নির্মাণ তদারকি করা এই প্রকৌশলী।
তিনি বলেন, প্রকল্পের ব্যয় আবারও বেড়ে হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৩ বছরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এবং সময়সীমা জুন ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিসিক এখন কাজ পুরোপুরি স্থগিত করেছে।
সিরাজগঞ্জের বিসিক কর্তৃপক্ষ মার্চ মাসে কোনো সংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই তাদের সদর দফতরে চিঠি লিখে প্রকল্পের সময়সীমা জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করে।
জাফর বায়েজিদ উল্লেখ করেন, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭২.৪৯% এবং ভৌত অগ্রগতি ৮৪%।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন হলে অক্টোবরে ড্রেনের কাজ শুরু হবে এবং চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, লেকের কাজ করতে দুই মাস সময় লাগবে। ড্রেন এবং রাস্তা ছাড়া বড় পরিসরে খুব বেশি কাজ বাকি নেই। এই দুটি বড় কাজ হয়ে গেলে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল বলেন, জেলাটি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এবং দেশের সব কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত। এই অঞ্চলটি মূলত কৃষিপ্রধান। শিল্প পার্কটি কৃষি পণ্য ব্যবহারের সুযোগ বাড়াবে। এর মধ্যে কিছু দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।