২০২৩ সালে ঢাকার আবাসনে পছন্দের শীর্ষে মিরপুর-উত্তরা
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়া ও তুলনামূলক কম দামের কারণে ঢাকায় বসবাসের জন্য মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষজন বাড়ি খুঁজছেন বলে উঠে এসেছে একটি বিশ্লেষণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এসব এলাকায় আবাসনের চাহিদা বেড়েছে।
অন্যদিকে দাম বেশি হলেও মিরপুর ও উত্তরায় বসবাসের পরিবেশ ভালো থাকায় পছন্দের তালিকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলে বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
দেশে ভূমি ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনাবেচার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বি-প্রপার্টির করা এক সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার আবাসন খোঁজা মানুষের মধ্যে মিরপুরে খুঁজেছেন সর্বোচ্চ ২৬.৬৮ শতাংশ, উত্তরাতে ১২ শতাংশ, বসুন্ধরাতে ৮.৩৬ শতাংশ এবং ধানমন্ডিতে খুঁজেছেন ৭.৪৮ শতাংশ।
এই বিশ্লেষণের তথ্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে বি-প্রপার্টি।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বি-প্রপার্টির কাছে চাহিদা আসা ৬৫ হাজার গ্রাহকের তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেখা গেছে, গত বছর ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ কেনার জন্য বাড়ি খুঁজেছেন। আর ৪০ শতাংশ মানুষ ভাড়ায় থাকার জন্য এসব এলাকাকে পছন্দ করেছেন।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে করা আরেক সমীক্ষায় বি-প্রপার্টি জানিয়েছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা ১,৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের। বি-প্রপার্টির কাছে আসা মোট অনুরোধের অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক—প্রায় ৫৪ শতাংশ—১,৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট খুঁজেছেন। ২৭ শতাংশ গ্রাহক খুঁজেছেন ১,০০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট। ছোটো আয়তনের এ ধরনের ফ্ল্যাটের জন্য জনপ্রিয় এলাকা মিরপুর ও মোহাম্মদপুর।
২০২৩ সালে নতুন ফ্ল্যাটের পাশাপাশি পুরনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও ক্ষেত্রেও মিরপুর পছন্দের তালিকায় রয়েছে বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়। পুরনো ফ্ল্যাট খোঁজা ক্রেতাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মিরপুরের।
বিপ্রপার্টি পরিচালক (সেলস অ্যান্ড বিজনেস অপারেশনস) মনির আহমেদ খান টিবিএসকে বলেন, ২০২৩ সালে দেশের আবাসন বাজার অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। বেশিরভাগ নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে আবাসন শিল্পের ওপর।
মনির আহমেদ খান বলেন, নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় বাড়ায় ডেভেলপার ও সম্ভাব্য বাড়ির মালিক উভয়পক্ষের জন্যই আরও চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর ফলে পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সুবাদে কৌশলক্রেতাদের সুযোগ বেড়েছে।
মিরপুর কেন চাহিদার শীর্ষে
আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুলনামূলক পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা, দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে থাকা এবং মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় মানুষ এখন মিরপুরকে বেশি পছন্দ করছেন।
রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের হেড অভ মার্কেটিং সামিউল হাসান বলেন, 'মিরপুরে চাহিদা বাড়ার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল একটি বুস্টার হিসাবে কাজ করেছে। এছাড়া স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নাগরিক সুবিধায়ও মিরপুর এগিয়েছে। চাহিদার কারণে আমরাও মিরপুরে নতুন নতুন প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছি।'
এছাড়া মিরপুরে ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলক কম বলে জানান তিনি। 'শহরের অনেক এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু হলেও মিরপুরের কিছু জায়গায় দাম শুরু হয় ৫ হাজার টাকা থেকে।'
এর কারণ হল মিরপুর এলাকায় এখনও উল্লেখযোগ্য খোলা জায়গা রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাড়ি নির্মাণের জন্য জমি নেই বলেও জানান সামিউল হাসান।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে সার্বিকভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি কমেছে। 'মানুষের হাতে টাকা কমে যাওয়ায় দূরে হলেও একটু কম দাম ও তুলনামূলক ছোট ফ্ল্যাট খুঁজছেন ক্রেতারা। ফলে মিরপুর ও উত্তরায় চাহিদা বেড়েছে।'
তিনি বলেন, জমির দাম ও নিবন্ধন খরচ বেশি হওয়ায় গুলশান, বনানী, বারিধারা, ইস্কাটন, ধানমন্ডির মতো এলাকাগুলোতে অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেশি। অন্যদিকে মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও এখনও মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে রয়েছে মিরপুরের অ্যাপার্টমেন্ট।