শতভাগ রপ্তানিমুখী জাম্বো ব্যাগ তৈরির কারখানা করছে দেশবন্ধু গ্রুপ
৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে শতভাগ রপ্তানিমুখী জাম্বো ব্যাগ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করছে দেশবন্ধু গ্রুপ।
জাম্বো ব্যাগ সাধারণত শুষ্ক জাতীয় পণ্য যেমন সার, বালু, রাসায়নিক, প্লাস্টিকের দানাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্যাকেজিং ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ব্যাগগুলো সাধারণত ফ্লেক্সিবল ফেব্রিক দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এসব ব্যাগ ফ্লেক্সিবল ইন্টারমিডিয়েট বাল্ক কন্টেইনার, বাল্ক ব্যাগ, বড় বস্তা, বড় ব্যাগ কিংবা টন ব্যাগ নামেও পরিচিত।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ব্যাগটি উৎপাদন হবে সম্পূর্ণ ইউরোপীয় মানের অটোমেটেড মেশিনারি দিয়ে।
নরসিংদীর পলাশ থানায় তৈরি হচ্ছে এ কারখানা। গত মাসের শেষের দিকে পরিদর্শনে দেখা যায়, দুই তলা বিশিষ্ট ইস্পাতের অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে চারদিকে দেয়াল তৈরির কাজ।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, 'প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ হবে। কিছু মেশিন জার্মানি থেকে আসছে, কিছু মেশিন চীন থেকে আসবে। এসব মেশিন কেনার জন্য ইতোমধ্যেই বুকিং হয়েছে।'
দেশবন্ধু গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ফ্লেক্সিবল ইন্টারমিডিয়েট বাল্ক কন্টেইনার লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।'
তিনি বলেন, 'এখানে প্রতিমাসে এক হাজার মেট্রিক টন ব্যাগ তৈরি হবে। সে হিসেবে প্রতি মাসে ১০০ কন্টেইনার জাম্বো ব্যাগ রপ্তানি হবে। মেশিনারি আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে। এ বছরের জুনেই উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে।'
তিনি জানান, দুই একর জমিতে কারখানাটি তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও দুই একর জমিতে এটি সম্প্রসারণ করা হবে।
জাম্বো ব্যাগের ব্যবহার
সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্পে জাম্বো ব্যাগের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ব্যাগগুলো তাদের শক্তি ও স্থায়িত্বের পাশাপাশি নমনীয়তার কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একটি ব্যাগে কয়েক টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যায়। খাদ্য ও পানীয়, ফার্মাসিউটিক্যালস, খনিজ পদার্থসহ বিভিন্ন শিল্পে এসব ব্যাগ ব্যবহৃত হয়।
গ্রুপটির কর্মকর্তারা বলছেন, শুকনো বাল্ক পণ্যগুলো পরিবহন এবং সংরক্ষণের জন্য জাম্বো ব্যাগ সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং আদর্শ ধরনের প্যাকেজিংগুলোর একটি। এগুলো নলাকার বা ফ্ল্যাট পলিপ্রোপিলিন (পিপি) বোনা কাপড় থেকে তৈরি করা যায়। এই কাপড়গুলো প্রলেপযুক্ত বা প্রলেপমুক্ত উভয়ই হতে পারে।
গ্রুপটি আরও জানিয়েছে, নকশা এবং আকার অনুযায়ী প্রতিটি জাম্বো ব্যাগের ধারণক্ষমতা ৫০০ থেকে ২০০০ কেজি। যার সেফটি লোড ৫:১ বা ৬:১ (৫:১ একক ব্যবহারের এবং ৬:১ একাধিক ব্যবহারের জন্য)।
২০৩৩ সালের মধ্যে জাম্বো ব্যাগের বৈশ্বিক বাজার ছুঁতে পারে ৮.২ বিলিয়ন ডলার
বাজার গবেষণা বিষয়ক সংস্থা ফিউচার মার্কেট ইনসাইটস অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জাম্বো ব্যাগের বাজার ছিল ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০৩৩ সালের মধ্যে এটি ৮.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফিউচার মার্কেট ইনসাইটস বলছে, বিশ্ব টেকসই প্যাকেজিং ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। পিপি জাম্বো ব্যাগের চাহিদা আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিপি জাম্বো ব্যাগগুলো পরিবেশবান্ধব। অন্যান্য প্লাস্টিকের ব্যাগের তুলনায় এটি পরিবেশের কম ক্ষতি করে। পিপি জাম্বো ব্যাগগুলো শিল্প খাতে আরও গতি পেয়েছে। কারণ এগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করার আগে একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
দেশবন্ধু পলিমারের জেনারেল ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন জানান, দেশবন্ধু সুগার মিলস চালু হওয়ার পর মোড়কের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৬৫ লাখ চিনির ব্যাগ প্রয়োজন হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড কারখানা স্থাপন করা হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রুপের একমাত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে কারাখানাটিতে সিমেন্টের ব্যাগসহ বছরে ৬ কোটি ব্যাগ উৎপাদন করা হচ্ছে।
আরিফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি হয়। আর দেশবন্ধু প্যাকেজিং লিমিটেডের কারখানার পণ্য দেশের বাজারে বিক্রিসহ রপ্তানিও হয়।'
তিনি বলেন, 'দেশবন্ধু প্যাকেজিং লিমিটেড এফআইবিসি, ডব্লিউপিপি ব্যাগ, পিই ব্যাগ (সার, ধান, লবণ, চিনি, কেমিক্যাল ইত্যাদি পণ্যের জন্য) উৎপাদন করে থাকে।'
আরিফ হোসেন বলেন, 'দেশবন্ধু প্যাকেজিং লিমিটেডের উৎপাদিত প্রায় ৭০০ টন জাম্বো ব্যাগ গত বছর রপ্তানি হয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে গ্রুপটি এখন ১০০ ভাগ রপ্তানিমুখী প্ল্যান্ট স্থাপন করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'নতুন কারখানা ফ্লেক্সিবল ইন্টারমিডিয়েট বাল্ক কন্টেইনার (এফআইবিসি) এই খাতে আমাদের তৃতীয় প্রকল্প।'