বাণিজ্য বাড়াতে কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে বেজা
দুইদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথকে আরও সুগম করতে কুড়িগ্রাম সদরে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও রৌমারী স্থলবন্দর এবং চিলমারী নৌ-বন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা আছে; সহজেই যাতায়াত করা যায়। তাই এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে।
আগামীকাল (২৫ মার্চ) বাংলাদেশে ৫ দিনের সফরে আসার কথা রয়েছে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকয়ের। আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন বলে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। সফরকালীন এই সময়ে দুইদেশের মধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেজা ইতোমধ্যে একটি খসড়া চুক্তিপত্র প্রস্তুত করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত কুড়িগ্রামে গিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি দেখেছেন।"
বেজা ইতোমধ্যেই 'কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল-১' এ ভুটানের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে।
শেখ ইউসুফ হারুন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাধবরাম মৌজা, বাঞ্চারাম মৌজা, সড়া মৌজা, কল্যাণ মৌজার অন্তর্ভুক্ত। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠার জন্য এ পর্যন্ত বেজা'র অনুকূলে ১৩৩.৯২ একর জমি বন্দোবস্ত দলিলমূলে মালিকানা প্রাপ্ত হয়ে নামজারি করা হয়েছে। এছাড়া, আরও ৬১.৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজার মধ্যে গেলো বছরের ৬ মে লন্ডনে এক সাক্ষাৎ হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ভুটানের রাজাকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দেন; প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তখন থেকেই বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে ভুটান।
এরই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ভুটান সরকারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকায় চাকররত কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হামিদ উজ জামান মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। সেই সঙ্গে কৃষি খাতে শিল্প কারখানা গড়ে তুললে এলাকার মানুষজন কাজ পাবে। এটি প্রতিষ্ঠা হলে এ জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক উন্নয়ন হবে।
বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য
২০২০ সালে বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ১০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানি এবং ৩৪টি পণ্যের আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের সরকারী তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫.০৬ মিলিয়ন ডলার। এই বাণিজ্যের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে– ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, গার্মেন্টস এবং খাদ্যপণ্য সামগ্রী; অন্যদিকে, ভুটান থেকে রপ্তানি হয়েছে প্রধানত ক্যালসিয়াম কার্বাইড, সিমেন্ট, ফেরোসিলিকন ও খাদ্যপণ্য।
বেজার লক্ষ্য, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একইসঙ্গে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে এইখাতে জাপান, ভারত এবং চীনের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে জাপানের সঙ্গে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় নবনির্মিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন বা জাপানিজ ইকোনমিক জোন বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এ পর্যন্ত পাঁচটি কোম্পানি সেখানে কারখানা নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করেছে।