ব্রয়লারের দাম বেড়েছে, সবজির দাম সামান্য কমলেও এখনও চড়াই
ঢাকার বাজারে ক্রেতাদের এখনও চড়া দামে সবজি, ডিম ও মুরগি কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম বলে দাম বেশি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। সবজির দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও তা এখনো মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে।
কাঁচামরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে অন্তত ২০-৪০ টাকা বেশি। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের ধাক্ক কাটিয়ে সবজি, ডিম ও মুরগির সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এ কারণে দাম কমছে না।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার টিবিএসকে বলেন, 'গত এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহের কারণে খামারগুলোতে অনেক মুরগি মারা গেছে। এখন বাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে ডিম-মুরগি কম। উৎপাদন স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।'
যদিও দাম বৃদ্ধির পেছনে শুধু সরবরাহ সংকটকে দায়ী করতে রাজি নন সুমন। তিনি বলেন, ডিম-মুরগির দাম সুকৌশলে সিন্ডিকেশন করা হয়। প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা সংকট হলে কৃত্রিমভাবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি সংকট তৈরি করে, যার কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০-২৩০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি সোনালী মুরগি আগের মতোই ৩৬০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি।
বাজারে খুব বেশি দেখা মেলেনি ভারতীয় পেঁয়াজের। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে আমদানি খরচ বেশি পড়ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, 'ভারতীয় পেঁয়াজ একেবারেই কম। দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সব জিনিসেরই এখন দাম বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বাড়লে হয়তো দাম কমে আসতে পারে।'
এদিকে সবজির বাজারে এখনও উত্তাপ কমেনি। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আদা-রসুনের বাজার কয়েকদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। দেশি রসুন ২০০-২২০ এবং চায়না রসুনের কেজি ২২০-২৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকায়।
কাঁচামরিচের দাম এখনও বাড়তি। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে খুচরায় ১৬০-২০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে অন্তত ২০-৪০ টাকা বেশি। এদিকে প্রতি কেজি বেগুন ও পেঁপে ৭০-৯০ টাকা, বরবটি ও কাঁকরোল ৬০-৭০ টাকা এবং পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ঢ্যাঁড়শসহ কয়েকটি সবজির দাম ৫০-৬০ টাকা।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আরিফুর রহমান। থাকেন নতুন বাজারে। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'আলুর দাম ৬০ টাকা। ডিমের হালি ৫০-৫২ টাকা। বাজারে গেলে দাম শুনে আঁতকে উঠতে হয়। আমরা যারা ছোট চাকরি করি, তাদের জন্য সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়ে পড়ছে।'
সার্বিক বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বাজারে অদৃশ্য হাতের কারসাজি হচ্ছে। এখন এ কারসাজি বন্ধ করতে হলে কঠোর তদারকি প্রয়োজন। কিন্তু যারা তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন, তারা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের কোনো উদ্যোগের প্রতিফলন বাজারে পড়ছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'শুক্র-শনিবার মানুষ বেশি বাজার করে। এই দুদিন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। ক্রেতারা কারও কাছে অভিযোগ দেবে, এমন নির্ভরযোগ্য কাউকে পায় না। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন আর কাউকে তোয়াক্কা করছে না, যে যার মতো দাম বাড়াচ্ছে।'