এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের 'স্নায়ুযুদ্ধে’ ফিরে যাওয়া উচিত নয়: শি জিনপিং
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর স্নায়ুযুদ্ধের যুগে ফিরে যাওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা রয়েছে চীনের।
নিউজিল্যান্ড আয়োজিত এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের সিইও ফোরামে এক ভিডিও বার্তায় শি বলেন, নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা বা ভূ-রাজনীতির ভিত্তিতে ছোট দল গঠনের প্রচেষ্টা করলে সেটি ব্যর্থ হতে বাধ্য। তিনি বলেন, "এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পূর্বের স্নায়ুযুদ্ধ যুগের সংঘাত ও বিভাজন আবারও ঘটা উচিত নয়।"
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট শির এমন মন্তব্য মূলত মার্কিন মিত্র জোটের তৎপরতার প্রেক্ষিতেই এসেছে।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল তাইওয়ান সফর করে। এরপরই, তাইওয়ান প্রণালীর দিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে টহল দেয় চীনের সামরিক বাহিনী। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সেই সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ তথ্য জানায়।
এদিকে, বাইডেন প্রশাসনের শুরু থেকেই সিনো-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কে চলছে বেশ উত্তেজনা। এই উত্তেজনা যেন বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির মাঝে বড় ধরনের বিরোধ বা সংঘর্ষের দিকে মোড় না নেয় সেজন্য প্রয়োজন প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা; মার্কিন কর্মকর্তারা এমনটিই মনে করেন।
ফলে, শি-বাইডেন বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন কূটনৈতিকরা। তবে, বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী সপ্তাহের মধ্যেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার অ্যাপেক অর্থনীতির ২১ নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী এই বার্ষিক ফোরাম। নিউজিল্যান্ড আয়োজিত সম্মেলনটি সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি ভার্চুয়ালি যোগ দেন। করোনা মোকাবেলায় চীনের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে বিগত প্রায় ২১ মাসে তিনি চীনের বাইরে কোথাও সফরে যাননি।
বাণিজ্য চুক্তি
আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি 'কমপ্রিহেন্সিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ' (সিপিটিপিপি)-এ যোগদানের ব্যাপারে তাইওয়ানের ইস্যুটি সপ্তাহের শেষের দিকে অ্যাপেক নেতাদের বৈঠকে উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীন নিজে সিপিটিপিপিতে যোগদানের আবেদন করলেও, এই চুক্তিতে তাইওয়ানের সদস্যপদের বিরোধিতা করছে। বেইজিংয়ের দাবি, তাইওয়ান চীনের অংশ। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে তাইওয়ানের কাছাকাছি সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন। অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ই সিপিটিটিপি-তে যোগদানের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
চীন সমর্থিত আরেকটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি 'রিজিওনাল কমপ্রিহেন্সিভ পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট' (আরসিইপি) কার্যকর হবে আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৫ টি দেশ এই চুক্তির সদস্য।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে অ্যাপেক সম্মেলনের আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্পদ, সম্ভবনা ও ভূরাজনীতির দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, মূলত এ কারণেই এমন প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে, এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপেক নেতারা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি।
জলবায়ু পরিবর্তন
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৬ একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায়, অ্যাপেকের বৈঠকেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বিষয়টিও উঠে আসে। প্রেসিডেন্ট শি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, চীন তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।
উদ্বোধনী ভাষণে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, অ্যাপেক এই অঞ্চলের শিল্পগুলোকে জীবাশ্ম-জ্বালানির ভর্তুকি থেকে মুক্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে৷
- সূত্র: রয়টার্স