ভাইরাস যুদ্ধে জীবনবাজি রাখছেন একদল চালক
জানুয়ারির শেষ দিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে, চীন সরকার উহানে গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই পূর্ণোদ্যমে নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নেমে পড়েন রাইড হেইলিং কয়েকটি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত শহরটির একদল গাড়িচালক। ওয়ান জিওশিয়ং এদেরই একজন।
২৭ বছরের ওয়ান জিওশিয়ং এবং তার সহকর্মীরা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব পালন করছেন। মানবজীবন রক্ষার এই যুদ্ধে তারা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য কর্মীদের পরিবহনের কাজ করছেন।
উহানের সব কয়টি হাসপাতালে এখন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীতে উপচে পড়ছে । ধারণ ক্ষমতার চাইতেও কয়েকগুণ বেশি রোগীকে এখন চিকিৎসা সেবা দিতে লড়ছেন স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা। চালক ওয়ানের মতো শহরটির বাণিজ্যিক চালকেরাও এখন সেই লড়াইয়ে শামিল।
মহামারি আকারের যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীদের। এরপরেও ওয়ান জিওশিইয়ং তার দায়িত্বের গুরুত্ব ভালোই বুঝতে পারেন।
ওই গাড়িচালক বলেন, আমি নিজে সংক্রমিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে ভাবি না। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দুশ্চিন্তা হয়। তাদের কেউ আক্রান্ত হলে এ সঙ্কটময় সময় জীবনদায়ী ব্যক্তিদের হারাবে।
উহানের ধমণী
গত ২৩ জানুয়ারি সকল বাস এবং সাবওয়ে ট্রেন বাতিলের পর রোগী পরিবহনে ৬ হাজার ট্যাক্সি নিয়োজিত করেছে চীন সরকার। এসব ট্যাক্সি শুধু রোগী নয়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ পরিবহনেরও একমাত্র মাধ্যম। প্রতিটি আবাসিক এলাকার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন থেকে চারটি ট্যাক্সি। তবে গুরুতর অসুস্থদের জন্য কিছু বিশেষ জীবাণুরোধী গাড়ির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জনসংখ্যার তুলনায় সরকারের দেওয়া গাড়ির পরিমাণ কম হওয়ায় এখন এই শূন্যস্থান পূরণ করছেন ওয়ানের মতো চালকেরা।
চীনা যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে এখন উহানের অ্যাপভিত্তিক গাড়ি চালক এবং সেবাকর্মীদের ৪টি গ্রুপ আছে, প্রতিটি গ্রুপে একশ’ করে সদস্য রয়েছেন। সাধারণত এসব গ্রুপে একরাত আগেই রাইড বুক করা যায়, তবে জরুরি অবস্থায় পড়লে যে কোনো মুহূর্তেই পাওয়া যায় কোনো না কোনো চালকের সাহায্য। আর সবসময় স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীরাই রাইড সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে চীনের সবচেয়ে বড় অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি ব্যবসা ডিডি স্বাস্থ্য কর্মীদের বিনামূল্যে পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে।