মানব মস্তিষ্ক ও কম্পিউটারের তারবিহীন সংযোগ স্থাপনে সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা
প্রথম বারের মতো মানব মস্তিষ্কের সাথে তারবিহীন কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাথে কম্পিউটার নির্দেশনার যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। স্নায়ুভিত্তিক প্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে এই গবেষণা।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুসারে, অংশগ্রহণকারীরা তারযুক্ত ব্যবস্থার মতো একই গতিতে টাইপিং স্পিড অর্জনে এবং সঠিকভাবে পয়েন্ট-অ্যান্ড-ক্লিক করতে সক্ষম হন।
আইইইই ট্রানজ্যাকশনস অন বায়োমেডিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাময়িকীর তথ্যানুসারে, ব্রেইনগেট টেকনোলজি নামক এই ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র একটি ট্রান্সমিটারের সাথে মানব মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সের সংযোগ স্থাপিত হয়। অংশগ্রহণকারী পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্যাবলেট কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জন সিমারাল বলেন, "এতোদিন ধরে যে তারযুক্ত ব্যবস্থা মানদণ্ডের শীর্ষে অবস্থান করছিল, আমরা দেখিয়েছি যে, তারবিহীন ব্যবস্থাও কার্যকরভাবে তার সমকক্ষ,"
"সিগন্যালগুলো যথাযথভাবে তারযুক্ত ব্যবস্থার মতো একই ধরনের সামঞ্জস্য রক্ষা করে রেকর্ড ও ট্রান্সমিট করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, আমরা তারযুক্ত সরঞ্জামাদিতে ব্যবহৃত ডিকোডিং অ্যালগরিদম এখানেও ব্যবহার করতে পারব। একমাত্র পার্থক্য এই যে, মানুষকে এখন আর যন্ত্রের সাথে সেঁটে থাকতে হবে না। একই সাথে, ব্যবস্থাটির প্রয়োগ নতুন সব সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করেছে," বলেন তিনি।
নতুন এই আবিষ্কার স্নায়ুভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ইতোমধ্যে এলন মাস্ক এবং ফেসবুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এই প্রযুক্তি।
সম্প্রতি এলন মাস্ক জানান, তার নতুন উদ্যোগ 'নিউরালিংক' এরই মধ্যে বানরের মস্তিষ্কে তারবিহীন চিপ স্থাপনের একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে, যার মাধ্যমে বানরটি ভিডিও গেম খেলতে সক্ষম হয়।
সর্বশেষ ট্রায়ালে ৩৫ এবং ৬৩ বছর বয়সী দুইজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি অংশ নেন। স্পাইনাল কর্ডের আঘাতের কারণে তারা প্যারালাইজড ছিলেন। ল্যাবের বাইরে ঘরে অবস্থানরত অবস্থাতেই তারা টানা ২৪ ঘন্টা তারবিহীন ব্যবস্থাটি ব্যবহার করতে সক্ষম হন।
তবে, এই ব্যবস্থার অপর একটি সুবিধা এই যে, নজরদারিতে নিয়োজিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীরা মহামারির মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের বাড়িতে যাতায়াত ছাড়াই তারবিহীন সংযোগের মাধ্যমে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারবেন।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক এবং ব্রেইনগেট ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রধান লি হকবার্গ জানান, "ব্যবস্থাটির মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই দীর্ঘ সময় ধরে এমন এক পদ্ধতিতে ব্রেইনের কার্যক্রম দেখতে সক্ষম, যা আগে প্রায় অসম্ভব ছিল।"
"পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের সক্রিয়তা এবং বাধাহীন, সহজাত ও বিশ্বস্ত যোগাযোগ পুনর্স্থাপনে ডিকোডিং অ্যালগরিদম নির্মাণ করতে এই প্রযুক্তি আমাদের সাহায্য করবে," বলেন তিনি।