বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ইরান ফুটবল দলের
খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি মেশানো উচিত নয়- অনেককেই এভাবে বলতে দেখা যায়। অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন। কিন্তু অনেকেই আবার এর উল্টোটা মনে করেন। কারও কারও ভাবনা এমন যে, খেলার মঞ্চ ব্যবহার করে সামাজিক সমস্যা দূর করার বার্তা দেওয়া যায়। এই তালিকার একজন ইরান ফুটবল দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি। ইরান সরকারের বিরুদ্ধে একপ্রকার বিদ্রোহই ঘোষণা করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া প্রতিবাদকারীদের পক্ষে আছেন তিনি এবং তার দল।
ফুটবল বিশ্বকাপে অংশ নিতে কাতারে আছে ইরান ফুটবল দল। বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে দলের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইরানি শাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আন্দোলনকারীদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেন দেশটির অধিনায়ক। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে দেশের অস্থির অবস্থা নিয়ে কথা বলেন এহসান।
গ্রিসের দল আয়েক অ্যাথেন্সের হয়ে খেলা ৩২ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার মনে করেন, দেশের মানুষ সুখে নেই। এ কারণেই প্রতিবাদীদের পক্ষে তিনি। এহসান বলেন, 'যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি দলের সমর্থন রয়েছে। আমাদের মানতে হবে যে আমাদের দেশের পরিস্থিতি ঠিক নেই এবং আমাদের জনগণ সুখী নয়।'
কাতার বিশ্বকাপে আজ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ইরান। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে এহসান বলেন, 'অন্য কোনও কিছুর আগে আমি ইরানে শোকাহত পরিবারের সকলের প্রতি সমবেদনা জানাতে চাই। তাদের (প্রতিবাদকারী) জানা উচিত যে, আমরা তাদের সাথে আছি। আমরা তাদের সমর্থন করি এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।'
ইরানি শাসকগোষ্ঠী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। জনগণের ওপর অত্যাচার চালানোর কারণে বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন দেশটির জনগণেরই একাংশ। কিন্তু এই দাবিতে কান দেয়নি বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চকে ব্যবহার করে আন্দোলকারীদের প্রতি সমর্থন জানালেন এহসান।
ইরান অধিনায়ক আরও বলেন, 'আমরা বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্বীকার করতে পারি না। আমার দেশের পরিস্থিতি ভালো নয় এবং খেলোয়াড়রাও এটা জানে। আমরা এখানে আছি, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা তাদের (প্রতিবাদী) কণ্ঠস্বর হতে পারি না বা তাদের সম্মান করা উচিত নয়। আমাদের যা কিছু আছে, তা তাদের কাছ থেকেই পাওয়া। আমাদের লড়াই করতে হবে। আমাদের যথাসাধ্য পারফর্ম করতে হবে এবং গোল করতে হবে। ইরানের সাহসী জনগণকে জয় এনে দিতে হবে। আমি আশা করি জনগণের প্রত্যাশা মতো পরিস্থিতি আসবে।'
বর্তমান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন ইরানের লক্ষ লক্ষ মানুষ। এখন পর্যন্ত ইরানি সরকারের অত্যাচারে ৪০০ জন প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি। এই পরিস্থিতির নেপথ্যে কুর্দিশ তরুণী মাসা আমিনির মৃত্য। এরপর থেকে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে আছে ইরান। তিন মাসেও এই বিদ্রোহ থামাতে পারেনি ইরান সরকার। এবার সেই বিদ্রোহের আঁচ এসে পড়ল বিশ্বকাপের মঞ্চেও।