খোঁড়ানো ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিনেই বাংলাদেশ শিবিরে হারের চিন্তা
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার চট্টগ্রাম টেস্টের কেবল দুই দিন গেছে। ভারত এক ইনিংসে ব্যাটিং করেছে, বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই বাংলাদেশ শিবিরে হারের দুশ্চিন্তা। হওয়াটাই স্বাভাবিক, খোঁড়ানো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যে ফলো-অনে পড়ার মুখে। ফলো-অন এড়োতে যতো করতে হবে, বাংলাদেশের জন্য তা তোলাটা আপাত দৃষ্টিতে কষ্টসাধ্য।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভারতের করা ৪০৪ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামা ৮ উইকেটে তুলেছে ১৩৩ রান। ফলো-অন এড়ানোর জন্য দরকার আরও ৭১ রান, হাতে উইকেট মাত্র ২টি। এই দুই উইকেটের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজই কেবল ভরসা, বাকিরা বোলার। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে ২৭১ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শিবিরে এখনই ভর করেছে হারের চিন্তা।
দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে শেষ হয় ভারতের প্রথম ইনিংস। এদিন সফরকারীদের শেষ দিকের ব্যাটসম্যানের দাপটে ভালোই ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। বোলাররা মিলে ১২৬ রান যোগ করেন দলের স্কোরকার্ডে। এ নিয়ে হতাশা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। আর ব্যাটিংয়ে নামার পর সেই হতাশা বেড়ে যায় আর বহুগুণে। নিয়মিত ধারায় ঝরে উইকেট বৃষ্টি।
৫ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফিরে যান নিজের ছায়া হয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ও চট্টগ্রামের ঘরের মাঠের ছেলে ইয়াসির আলী রাব্বি। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন শান্ত। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া লেংথ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
হতাশা বাড়ে দুই ওভার পরই। চতুর্থ ওভারে উপড়ে যায় প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নামা ইয়াসিরের স্টাম্প। এবার শিকারির ভূমিকায় ভারতের অভিজ্ঞ পেসার উমেশ যাদব। ডানহাতি এই পেসারের ১৩৯ কিলোমিটারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাটে চালিয়ে ইনসাইড এজ হন ইয়াসির, ভেঙে যায় স্টাম্প। ১৭ বলে ৪ রান করে থামেন তিনি।
শুরুতেই দিক হারিয়ে ফেলা দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন জাকির হাসান ও লিটন কুমার দাস। অভিষিক্ত ওপেনার জাকিরকে নিয়ে লড়াই শুরু লিটনকে সাবলীল দেখাচ্ছিল। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লড়াইটা দীর্ঘ হয়নি তারও। কিছুক্ষণ পরই ফিরে যান লিটন, এরপর থামেন জাকিরও।
৩০ বলে ৫টি চারে ২৪ রান করা লিটন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়েছেন। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের একটি ডেলিভারি ডিফেন্স করলেও বল ব্যাটে লেগে ড্রপ দিয়ে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়। রাজ্যের হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা জাকির ৪৫ বলে ২০ রান করে সিরাজেরই শিকারে পরিণত হন। বাংলাদেশের যাওয়া প্রথম চার উইকেটের তিনটিই নেন সিরাজ।
এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে শুরুর মতো আবারও দিকহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এবার হাল ধরেন। তাদের ব্যাটেও স্বস্তি মেলেনি। অসাধারণ বোলিং করা ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব ফিরিয়ে দেন এ দুজনকে। মুশফিকের সঙ্গে ১৯ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন অধিনায়ক সাকিব। কুলদীপের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ২৫ বলে ৩ রান করা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
মুশফিক-সোহান জুটিও দলকে খাদের কিনার থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। এই দুই ব্যাটসম্যান গড়েন ২২ রানের জুটি। উইকেটরক্ষক সোহানের বিদায়ে শেষ সম্ভাবনার জুটিটি ভাঙে। ফেরার আগে ২২ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করেন। একপাশ সামলে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যাটিং করা মুশফিক ৫৮ বলে ২৮ রান কেরে আউট হন, যা বাংলাদেশের ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
স্পিনার হয়েও অনেক বিপদেই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের আস্থা হওয়া তাইজুল ইসলাম এরপর বিদায় নেন, রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। এরপর পেসার এবাদত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দিনের বাকি ৯ ওভার পার করেন মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১৬ রানে ও এবাদত ১৩ রানে অপরাজিত আছেন। ভারতের পেসার সিরাজ নিয়েছেন ৩টি উইকেট। চায়নাম্যান কুলদীপ নেন ৪টি উইকেট। বাকি উইকেটটি পান উমেশ যাদব।