স্কুল ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন কেপিবি, ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে হাসপাতালে সিফাত
জয় নিশ্চিত হতেই ভোঁ দৌড়, কার আগে কে জয়ের স্মারক স্টাম্প দখলে নেবে সেই লড়াই। না পেয়ে চললো কাড়াকাড়িও। ছয়টি স্টাম্প ১১ জন নিতে পারবেন না, এটা বুঝে উঠতেই উদযাপনে মন দিলেন খুদে ক্রিকেটাররা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের পাশেই চললো শিরোপা জয়ের আনন্দ মিছিল। উদযাপন প্রায় শেষ, তখনও একজন একটু আলাদা হয়ে লাফিয়ে শূন্যে উঠে, আকাশে হাত ছুঁড়ে শিরোপা উদযাপন করে গেলেন।
এই বাধভাঙা আনন্দ হতেই পারে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল এন্ড কলেজের (কেপিবি) খুদে ক্রিকেটারদের। লম্বা সফরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হোম অব ক্রিকেটে বিজয় নিশান উড়িয়েছেন তারাই। বুধবার প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে স্কুলটি।
ফাইনালে পিরোজপুরের সরকারি কে.জি উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৮৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে কেপিবি। সেঞ্চুরি করে এই জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন যিনি, সেই মোহাম্মদ শাহরিয়া সিফাত সামি অবশ্য শিরোপা উদযাপন থাকতে পারেননি। গরমে অসুস্থ হয়ে যান তিনি, মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে করে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হাসপাতালে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ভালো আছেন সিফাত।
বছরজুড়ে কেপিবি স্কুল এন্ড কলেজের খুদে ক্রিকেটাররে কোচিং করানো মুস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের ফিজিও বলেছে হিট স্ট্রোক হয়েছে সিফাতের। ডাক্তাররা এখনও চেক করছে। হয়তো দুই-তিন ঘণ্টা লাগবে। গরম ছিল প্রচুর, আমি বোলিংটা দিতে চাইনি তাকে। তবে এখন ভালো আছে। কথা বলছে, চোখ খুলছে। আমাদের ম্যানেজম্যান্ট বলেছে, ওর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে।'
ব্যাটসম্যানরা রান করবেন, বোলাররা নেবেন উইকেট। কিন্তু এই ম্যাচে হয়েছে পুরো উল্টো, আর এটাই শিরোপা এনে দিয়েছে কেপিবি স্কুল এন্ড কলেজকে। সিফাত একজন পেসার, তিনিই খেলেছেন ১৪৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১১৫ বলে ইনিংসটি ৯টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাজান তিনি। ৪১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর তার ইনিংসের সুবাদেই ৮ উইকেটে ২৮৬ রান পায় কেপিবি। সিফাতকে সঙ্গ দেওয়া নাশিত মুস্তাকিম ৬৮ বলে ৩০ ও ঝড়ো ব্যাটিং করা আলিফ মাহমুদ ২৬ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৪২ রান করেন।
বল হাতেও কেপিবি স্কুল এন্ড কলেজকে এমন একজন পথ দেখান, যিনি মূলত ব্যাটসম্যান। মজার ব্যাপার হচ্ছে এবারের স্কুল ক্রিকেটে আজই প্রথম বোলিং করলেন হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নেওয়া মোহাম্মদ হোসেন। ৪০তম ওভারে হ্যাটট্রিক করে নিয়ে কে.জি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ইনিংস গুটিয়ে দেন এই অফ স্পিনার। ৪ ওভারে ৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। শুরু থেকেই নিয়মিত ধারায় উইকেট হারানো পিরোজপুরের স্কুলটি ৪০ ওভারে ৯৯ রানে অলআউট হয়েয যায়। স্কুলটির তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন, সর্বোচ্চ ২২ রান করেন অধিনায়ক অনিক।
সিফাত এবং হোসেনের কাছ থেকে তাদের দলেরও কেউ এমন পারফরম্যান্স আশা করেননি। হোসেন নিজেই অবাক এমন বোলিং করতে পেরে। ধানমন্ডিতে শেখ জামাল ক্রিকেট অ্যাকডেমিতে অনুশীলন করা এই খুদে ক্রিকেটার টিবিএসকে বলেন, 'আমি মূলত ব্যাটসম্যান, এবারের স্কুল ক্রিকেটে আজই প্রথম বোলিং করলাম। এমন বোলিং করবো, আবার হ্যাটট্রিকও হয়ে যাবে; ভাবতেই পারিনি। খুবই ভালো লাগছে যে, স্কুলের শিরোপা জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি। শিরোপা হাতে নিয়ে খুবই ভালো লেগেছে, অসাধারণ এক অনুভূতি।'
কোচ শাহরিয়ারের কাছে সিফাতের সেঞ্চুরি অবাক করার মতো ঘটনা। বিস্মভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, 'এটা পুরোপুরি বিস্ময়ের। বোলিংয়ের সে অনেক ভালো। আমাদের মুস্তাফিজের (মুস্তাফিজুর রহমান) কাটিংয়ে অনেক ধরনের বল করতে পারে সে। ও ব্যাটিংও পারে, একদমই পারে না এমন নয়। সোজা ব্যাটে খেলতে পারে। ওকে শুধু বলেছিলাম, 'মাঠ মিরপুর। জীবনে আর কখনও সুযোগ আসবে কিনা আমি জানি না। তোমার জন্য হতে পারে এটাই শেষ মঞ্চ অথবা জাতীয় দলের চেইনে ঢুকতে পারা। হয়তো ও কথাটা মাথা নিয়েছে।' শুরুতে পিচে থেকেছে। পরে যতো সময় গেছে, মনে হয়েছে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। আমার দৃষ্টিতে সে এতো বড় ব্যাটসম্যান নয়।'
প্রাইম বাংক স্কুল ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছে কেপিবি স্কুল এন্ড কলেজ। রানার্সআপ সরকারি কে.জি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় পেয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। সারা দেশের ৩৫২টি স্কুলের প্রায় ৮ হাজার ৮০০ ক্ষুদে ক্রিকেটারের অংশগ্রহণে শুরু হয় স্কুল ক্রিকেট। গত ২৮ এপ্রিল শেষ হয় জেলা পর্যায়ের খেলা। সেদিনই ৬৪ জেলার সেরা স্কুলগুলো নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা শুরু হয়। এই ধাপে ১৪টি ভেন্যুতে ৫৭ ম্যাচ শেষে মেলে সাত বিভাগের সেরা দল।