লিটন-মিরাজ বীরত্বের পর হাসানের তোপে বাংলাদেশের মুখে হাসি
১২ রানের ব্যবধান নিয়ে আক্ষেপ থাকার কথা নয় বাংলাদেশের। শুরুতে যে অবস্থা হয়, মনে হয়েছিল ৫০ রানের আগেই গুটিয়ে যাবে তাদের ইনিংস। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দলের বিপর্যয় কাটিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দেন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ, গড়েন রেকর্ড জুটি। এরপর বোলারদের নিয়ে লড়াই করা লিটন সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছেন আরও অনেকটা পথ।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬২ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে পাকিস্তান ২৭৪ রান তোলে, বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ১২ রানে। অর্থাৎ, ১২ রানের লিড পেয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান। ব্যবধান হতে পারতো ২০০ বার তারও বেশি, লিটন-মিরাজের দৃঢ়তায় বড় রক্ষাই হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের।
এরপর বল হাতেও শুরুটা দারুণ হয়েছে বাংলাদেশের। ১২ রানে এগিয়ে থেকে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসে নামা পাকিস্তানের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ১.৪ ওভারে স্বাগতিকদের ২টি উইকেট তুলে নিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। ৩.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৯ রান করে দিনের খেলা শেষ করে পাকিস্তান, তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ২১ রানের। ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক ও নাইট ওয়াচম্যান খুররাম শাহজাদকে ফিরিয়ে দেন হাসান।
প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিন টস জিতে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। বল হাতে দাপট দেখান মিরাজ, তাসকিনরা; তাতে পাকিস্তানকে ৩০০ রানের আগেই আটকানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে ২ ওভার ব্যাটিং করে বিনা উইকেটে ১০ রান তোলে বাংলাদেশ।, সাদমান ইসলাম অনিক ৬ ও জাকির হাসান শূন্য রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
কিন্তু তৃতীয় দিনের শুরুতেই এলোমেলো অবস্থা। পাকিস্তানের দুই পেসার খুররাম আহমেদ ও মীর হামজার তোপের মুখে আসা যাওয়ার মিছিলে মাতেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দলীয় ১৪ রানে খুররামের শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন জাকির। ৫ রান পর সাদমানকেও ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের ডানহাতি এই পেসার।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ তখনও জানে না সামনে এতোটা কঠিন পথ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। দলীয় ২০ রানে ফিরে যান অধিনায়ক শান্ত ও মুমিনুল হক। বাংলাদেশের প্রথম ৩ উইকেটই নেন খুররাম। পরে উইকেট উদযাপনে যোগ দেন মীর হামজা। এক ওভারের ব্যবধানে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানদের ফিরিয়ে স্বাগতিকদের কোণঠাসা করে ফেলেন এই দুই বোলার।
২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দলের হাল ধরে দ্রুতই উইকেটে থিতু হয়ে যান লিটন ও মিরাজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে গড়েন ১৬৫ রানের জুটি। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে কীর্তি নেই। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৫০ বা এরচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়ার প্রথম নিদর্শন গড়লেন লিটন-মিরাজ। এই জুটি গড়ার পথে ১২৪ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন মিরাজ।
মিরাজের ইনিংসটি একটি রেকর্ড, ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেটে হারানো দলের পক্ষে আটে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এখন তিনি। মিরাজ ফেরার পর বোলারদের নিয়ে লড়াই চালান লিটন, তাকে অনেকটা সময় সঙ্গ দেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যাওয়া পেসার হাসান মাহমুদ। ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ২২৮ বলে ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৩৮ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস খেলেন লিটন, এটা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। দুই বছর দুই মাস ও ১৮ ইনিংস পর করা সেঞ্চুরিতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ও ইমরুল কায়েসকে ছাড়িয়ে যান তিনি। এ দুজনের মতো তিনিটি সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন লিটন। সর্বশেষ ২০২২ সালে মে মাসে টেস্টে সেঞ্চুরি করে তিনি, ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
দলকে উদ্ধার করা এই সেঞ্চুরিতে দারুণ এক কীর্তিতে নাম উঠেছে লিটনের। টেস্টের ইতিহাসে দলের রান ৫০ এর নিচে থাকা অবস্থায় ছয়-সাতে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। বাকি দুই ফরম্যাটে ইনিংস উদ্বোধন করলেও টেস্টে ছয়-সাত নম্বরে ব্যাটিং করেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। তার আগের তিন সেঞ্চুরির একটি পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করে। বাকি দুটির একটি ছয় ও আরেকটি সাতে ব্যাটিং করে।
অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে অপরাজিত হিসেবে মাঠ ছাড়া হাসান ১৩ রান করেন। এ ছাড়া ওপেনার সাদমান করেন ১০ রান। বাংলাদেশের সাতজন দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। বাংলাদেশের ইনিংস এলোমেলো করে দেওয়া খুররাম ২১ ওভারে ৯০ রানে ৬টি উইকেট নেন, এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আরেক পেসার মীর হামজা ১৬ ওভারে ৫০ রানে নেন ২টি উইকেট। ডানহাতি অফ স্পিনার সালমান আগা পান ২টি উইকেট।