যারা শুধুই নবজাতকের ছবি তোলেন
একটি শিশু জন্মের পর যেন চোখের পলকে বড় হয়ে যায়। অদ্ভুত এ রূপান্তরের সময়টুকু স্মৃতিবন্দি করে রাখতে ফোনের ক্যামেরার সুবিধা নেন বাবা-মায়েরা। আবার সন্তানের বেড়ে ওঠার ছবিগুলো সুন্দর ও ভালো মানের হোক, এমনটিও চান অনেক অভিভাবক।
ছোট্ট সোনামণিদের সুন্দর মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করার জন্য বছর পাঁচেক আগে `স্টুডিও পিকচারিফিক' নামে একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন মাইশা সামিহা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তার তোলা শিশুদের বিভিন্ন ছবি।
স্টুডিওটি তার কাছে একটি আবেগের জায়গা বলে জানান মাইশা। তার ভাষ্যে, '২০১০ সালে প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা পাই। আমার চাচার কাছ থেকে পাওয়া উপহার ছিল সেটি। ছবি তোলার ক্ষেত্রে তিনি আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। তিনি যা-ই করতেন, সবকিছুই আমার খুব ভালো লাগত। ছবি তোলার প্রতি আমার এ আবেগ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি বলে আমি মনে করি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতি সপ্তাহে ছোট ছোট ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। ২০১৭ সালে স্নাতক শেষ হওয়ার পর ছবি তোলাকে পেশা হিসেবে নেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষার্থী। তবে বিয়ে এবং প্রচলিত কাজগুলোর প্রতি খুব একটা আকর্ষণ ছিল না তার। বরং যেসব বিষয় নিয়ে ফটোগ্রাফি হয়নি, সেগুলোই বেশি টানতো তাকে। সে ধারায়ই শিশুদের ছবি তোলার বিষয়টিকে তুলনামূলকভাবে নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয় তার কাছে।
"ওয়েডিং ফটোগ্রাফি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এমনকি বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরের ফটোগ্রাফিও খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নবজাতকদের ওপর ফটোগ্রাফি সেরকম জনপ্রিয় নয়।"
২০১৮ সালে, গুলশান ১-এ স্টুডিও তৈরি করতে এবং এতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন মাইশা। সে বছরই, ফটোগ্রাফির ওপর মালয়েশিয়ায় একটি কর্মশালায় যোগ দিয়ে পোর্ট্রেট, স্টুডি লাইটিং শেখেন তিনি। পরের বছর নবজাতকদের ছবিতে আরও দক্ষতা অর্জনের জন্য আরেকটি কর্মশালায় যোগ দেন তিনি। ওই কর্মশালাটি পরিচালনা করেন পুরস্কারজয়ী নিউবর্ন ফটোগ্রাফার তারা বার্গম্যান।
মাইশা জানান, তিনিই দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত নিউবর্ন ফটোগ্রাফার।
মাইশার মতে, জন্মের পঞ্চম থেকে চৌদ্দতম দিন হলো নবজাতকের ছবি তোলার জন্য উপযুক্ত সময়। জন্মের দুই সপ্তাহ পর থেকে শিশুরা খুব 'একটিভ' হয়ে ওঠে। ওইসময় তাদের ঘুমও অনেক কমে যায়, ফলে নিখুঁতভাবে ছবি তোলা কঠিন হয়ে যায়।
বর্তমানে, স্টুডিও পিকচারিফিকের চারজনের একটি দল রয়েছে। এরমধ্যে দুইজন নারী ফটোগ্রাফার এবং একজন পুরুষ সিনেমাটোগ্রাফার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ নবজাতকের ছবি তুলেছেন তারা। সদ্যোজাত শিশুদের ছবি তুলতে ১৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে তাদের।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে, মাসিক প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকত। এখনও মহামারির দশা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে গড়ে দেড় লাখ টাকার মতো লাভ হয় তাদের।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে নবজাতক শিশুদের ছবি তোলা অনেক বেশিই কঠিন উল্লেখ করে মাইশা বলেন, "আপনি যত বড় ফটোগ্রাফারই হোন না কেন, এই পেশায় পারদর্শী হতে চাইলে বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার দারুণ ক্ষমতা থাকতে হবে, বিশেষ করে শিশুরা যখন কাঁদে তখন মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
সদ্যোজাতের ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে প্রপসের ব্যবহার খুবই জরুরী বলে মত মাইশার। তিনি বলেন, "প্রপস ছাড়া কোনো গল্প ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সঠিক সেট ডিজাইনিং হলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত ছবিটি পাওয়া সম্ভব।"
দোলনা থেকে শুরু করে নবজাতকের আসবাব, ব্যাকড্রপ- মাইশার স্টুডিওতে ব্যবহৃত সব প্রপসই চীন থেকে আমদানি করা। প্রতিবার ব্যবহারের আগে এগুলো ধুয়ে, স্যানিটাইজ করে নেন তিনি।