পলিথিনের উপাদান আমদানির ওপর চড়া শুল্ক চায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন ও পরিবেশবান্ধব ব্যাগ উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে চায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পলিথিন উৎপাদনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক দানা আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআরকে) অনুরোধ করা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩১তম সভায় অবৈধ পলিথিন উৎপাদন, প্যাকেজিং ও পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ সভায় পলিথিন মোড়ক ব্যবহার করে পণ্য বাজারজাত করার উপর ‘ইকো ট্যাক্স’ আরোপের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে এ কমিটির ৪৪তম সভায় অবৈধ পলিথিনের ব্যবহার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে পলিথিনের কাঁচামাল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মন্ত্রণালয় এনবিআরকে একটি চিঠি দিয়েছে। যেখানে পরিবেশবান্ধব পলিথিনের বিকল্প ব্যগ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে প্লাস্টিক দানার আমদানির উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
২০০২ সালে বাংলাদেশ পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এটি বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। যার একটি ছিল নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা।
এর ফলে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার একেবারে কমে যায়। সে সময় পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে পলিথিনের পরিবর্তে কাগজের ঠুঙা, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে ২০০৬ সাল থেকেই আবার একটু একটু করে বাড়তে থাকে পলিথিনের ব্যবহার।
এক দু’বছরের মধ্যেই আবার হাটে বাজারে সব ক্ষেত্রে আবার পলিথিনের রাজত্ব শুরু হয়। বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার একেবারে ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরকে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালাতে দেখা যায়।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব শাহরিয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মন্ত্রণালয় এনবিআরকে চিঠি দিয়ে একটা দায়সারা কাজ করেছে। কারণ পলিথিন বন্ধ করার ইচ্ছে থাকলে দানা আমদানি বন্ধ করার দাবি করা উচিত, তা না করে ট্যাক্স বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এখন অবশ্য উদ্বেগটা শুধু পলিথিনেই নেই। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতি বছর প্রায় ৮৭ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে এবং যা পরিবেশকে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কারণ এগুলো বায়োডিগ্রেডেবল নয় বলে মাটির সঙ্গে মিশে না। বছরের পর বছর এভাবে থেকে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ফুড র্যাপার, কটন বাট, ওয়ান টাইম প্লেট, গ্লাস, পেস্ট-শ্যাম্পুর প্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক।
এনবিআর সূত্র বলছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালণয়ের চিঠিটি তারা পেয়েছে এবং এ বিষয়ে কাজও শুরু করেছে।
তবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান বলেন, এটা ঠিক যে পলিথিন বন্ধ করতে চাইলে শুধু প্লাস্টিক দানার আমদানি শুল্ক বাড়ালেই চলবে না, পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী সভাগুলোতে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে এর জন্য কিছুটা সময়েরও দরকার বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।