মশা নিধনে ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার
‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’, সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে একে মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য তৈরির কথা ভাবছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাসসকে বলেন, “এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বলে ‘কেন্দ্রীয় মশক নিবারণী দপ্তর’ নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। তবে আইনমতে, প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্ব মশা-নিধন। আগে যেহেতু স্থানীয় সরকারের এত প্রতিষ্ঠান ছিল না, তাই কেন্দ্রীয়ভাবে ম্যালেরিয়া নিবারণের জন্য ‘মশক নিবারণী দপ্তর’ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আইনের মধ্যে বলা আছে, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা মশা নিধন করবে। সুতরাং এখন এটা নিয়ে করণীয় নির্ধারণে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।”
তবে এর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য বিষয় জড়িত। মশক নিবারণী দপ্তরটির পরিধি কতটুকু বাড়ানো হবে, কাদের সঙ্গে এটির সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং এটি মন্ত্রণালয় বা সিটি কর্পোরেশন কোনটির অধীনে থাকবে সেসব নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে চলে এলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কোন খাত থেকে আসবে সে সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হতে হবে। তাই বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান হেলালুদ্দীন আহমদ।
মশা নিধনে গবেষণার জন্য একটি আধুনিক গবেষণাগার তৈরির পরিকল্পনার উল্লেখ করে সচিব বলেন, “কোলকাতার আদলে একটি গবেষণাগার করা যায় কিনা এ নিয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে কাজ করছে।”
ঢাকার ম্যালেরিয়া নিরোধের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ‘মশক নিয়ন্ত্রণ স্কিম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর জনবলকে পরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আত্মীকরণ করা হয়। ওরাই এখন দুটি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে রাজধানীর মশা নিধনে কাজ করছেন।
এই প্রতিষ্ঠানের জনবল বাড়িয়ে ওষুধ কেনার নিজস্ব ক্ষমতাসহ কীট নিরোধে গবেষণা কার্যক্রম চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। তাহলে প্রতিষ্ঠানটি মশা-নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক আ ন ম ফয়জুল হক বাসসকে বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে ঢাকায় মশা মারার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। তখন সংস্থাটি বেশ জমজমাট ছিল। অনেক লোক কাজ করতেন। মশা নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করতেন ওরা।”
তিনি জানান, মশক নিয়ন্ত্রণ স্কিমের আওতায় কন্টিনজেন্ট হিসেবে ৪১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এদের মধ্য থেকে ৩৩৮ জনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। এরপর মশা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে কিছু কাজ হয়।
১৯৮০ সালে বিভাগটিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। ১৯৮২ সালে এনাম কমিটি ৩৯৬টি পদ সৃজন করে এই দপ্তরের জনবল পুনর্বিন্যাস করে। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’। ওই সালেই প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় থেকে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ন্যস্ত করা হয়।
ফয়জুল হক বলেন, ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভাগ হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুটি সিটির অধীনে রাখা হয়। এখন সংস্থটির জনবল ২৭৯ জন। এর মধ্যে ২৩১ জন ক্রু, ৩২ জন সুপারভাইজার ও ৬ জন ইনসেক্ট কালেক্টর (আইসি) রয়েছেন। এই জনবল অর্ধেক করে দুই সিটি কর্পোরেশনে ভাগ করে দেওয়া হয়। তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দপ্তরটি মশা নিধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে আসার পর থেকে যে কাজে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হল মশা নিধন করা। কিন্তু আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমরা শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মশা মারার ওষুধ বিভিন্ন জোনে বিতরণ করি এবং এখানে ওষুধ মজুদ করি। অর্থাৎ ভবনটি এখন গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
১৯৮০ সালের আগে এখানে একটি গবেষণাগার ছিল। নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রমও চলত। এখন গবেষণাগারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়ন করে জনবল বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাহলে সংস্থাটি শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের মশাবাহিত রোগ নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।