৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণমিছিল, যুগপৎভাবে নামছে আরো ১২ দল
আগামী ২৪ তারিখ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ হওয়ায় ২৪ তারিখের গণমিছিল ৩০ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ ঘোষণা দেন তিনি।
গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের ঘোষণা দেয়, কিন্ত গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা গোলাপবাগের গণসমাবেশ থেকে বিএনপিও একই তারিখে রাজধানীতে গণমিছিলের ঘোষণা দিলে রাজনীতিতে দেখা দেয় উত্তাপ। গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে তারিখ পরিবর্তনের আহবান করা হয়। অবশেষে আওয়ামীলীগের আহবানে সাড়া দিয়ে বিএনপি কর্মসূচির তারিখটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়।
২৪ তারিখ গণমিছিল না করার কারণ হিসেবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'যেহেতু বিএনপি সংঘাত চায় না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় সঙ্কটের সমাধান চায়। একইসাথে যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের দলীয় কাউন্সিলের কারণে গণমিছিল কর্মসূচি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন। সেহেতু আমরাও রাজনৈতিক দল হিসেবে আচরণ করতে চাই।'
নজরুল ইসলাম খান বলেন, '১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচির যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ওই দিন এই কর্মসূচি ঢাকায় করব না। তবে সারাদেশের মহানগর ও জেলায় ওই দিনই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় এই কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।'
৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের নতুন তারিখ কেন বেছে নেয়া হলো-এর ব্যাখ্যায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের যে আন্দোলন, যথাযথ নির্বাচন দাবি আদায়ের যে লড়াই, সেজন্য জনগণকে ৩০ ডিসেম্বর স্মরণ করিয়ে দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৮ সালের এই ৩০ ডিসেম্বরের দিনে সরকার দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত করে ক্ষমতায় এসেছে।'
এই লড়াইয়ে অনেক রাজনৈতিক দল যুক্ত হবেন তাদের মধ্যে অনেকেই একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, এজন্য ওই সকল দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা আশা করছি যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে।'
অতীতের মতো এদেশের সংকট মোকাবেলা করবে জনগণ: মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'প্রমাণ রয়েছে জনগণ এরশাদের স্বৈরতন্ত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় করেছে। পাকিস্তানের আইয়ুব খানকে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় করেছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে- একজন প্রেসিডেন্ট, একজন প্রাইম মিনিস্টার তাদের ১৮ বছরের রাজত্ব…জনগণ যখন রাস্তায় নেমেছে তাদের ১৮ বছরের রাজত্ব উড়ে গিয়েছে। অতঃপর জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলংকা করতে পেরেছে, এরশাদের বিরুদ্ধেও আমরা করতে পেরেছি, তাহলে এখন কেন আমরা করতে পারব না। এদেশের সংকট মোকাবেলা জনগণ করবে। অতীতেও করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশের সংকট রাস্তায় মোকাবেলা করে তারা সমাধান করবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।'
জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) 'মহান বিজয় দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, 'দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করবে। জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।'
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ যদি গায়ের জোরে এভাবে ক্ষমতায় থাকে তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। যে অর্থনীতি তারা ধ্বংস করেছে এ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। যে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সে বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারবে না।'
'আমেরিকার রাষ্ট্রদূত গুম হওয়া একটি পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে গিয়েছেন। সেখানে সরকারের পেটোয়া বাহিনী তাকে অপমান করেছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।গুলো সরকার কিভাবে লুকিয়ে রাখবে! বিশ্বসভায় সরকার এখন একঘরে হয়ে গেছে', মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র এ নেতা।
যুগপৎ আন্দোলনে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির সাথে নামছে ১২টি দল
যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে ২০ দলীয় জোটভুক্ত ১১টি দল গণমিছিল কর্মসূচি পালন করবে।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দলগুলো থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বিবৃতিদাতারা হলেন জাতীয় পার্টি ( জাফর) চেয়ারম্যান জনাব মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বীর প্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি চেয়ারম্যান কারী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপি-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল রকিব, মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির-মহাসচিব, এডভোকেট আবুল কাশেম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক, কমরেড সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির আলোকে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির প্রতিবাদে, অনির্বাচিত দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে এ গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়াও কর্ণেল অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) বিএনপির ১০ দফার সাথে ঐক্যমত জানিয়ে ৩০ ডিসেম্বর মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
৩০ তারিখ জামায়াতে ইসলামীও যুগপৎ আন্দোলনে ঢাকায় নামবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ টিবিএসকে বলেন, ''বিএনপির ২৪ ডিসেম্বর কর্মসূচির দিনে আমরা নামার ঘোষণা দিয়েছি, পরে আমরা স্থগিত করি। তবে বিএনপির ৩০ তারিখ গণমিছিলে আমাদের সমর্থন আছে, ৩০ ডিসেম্বর মাঠে নামার বিষয়টি আমরা দলীয়ভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো।'