খুলনা সিটি নির্বাচন: আ.লীগ ছাড়া সব মেয়রপ্রার্থীর এজেন্ট সংকট
আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী শনিবার মধ্যেরাতের পর থেকে প্রার্থীরা আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না। শেষ মুহূর্তে শনিবার বিকেলেও প্রচার প্রচারণায় উত্তপ্ত ছিল খুলনা শহর।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মো. আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এস এম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এস এম শফিকুর রহমান।
গত ২৬ মে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে মেয়রপ্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন। শহরের উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাসও দিয়েছেন অহরহ। তবে ভোটের দিনে সব কেন্দ্রে ভোটকক্ষগুলোতে (বুথ) এজেন্ট দিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ছাড়া বাকি চারজন। কারণ রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় অধিকসংখ্যক কর্মী জোগাড় করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এটা নিয়েও শঙ্কিত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, কারণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা অন্যান্য দলের এজেন্ট দেখতে না পেয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, 'নির্বাচনের দিন বিদেশি বা দেশি পর্যবেক্ষক এসে যদি দেখে সব বুথে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্ট আছে, অন্য প্রার্থীদের নেই; তখন তারা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য বা ধারণা করতে পারেন। অন্যান্য প্রার্থীদের উচিত সবগুলো ভোটকক্ষেই এজেন্ট দেওয়া।'
তিনি জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্র ও ১ হাজার ৭৩২টি বুথে এজেন্ট দেওয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সব ভোটকক্ষে পাঠানোর জন্য এজেন্টদের তালিকা করেছে ইসলামী আন্দোলন। তবে তাদেরকে বুথে পাঠাতে পারবে কি না, তা তারা নিশ্চিত নয়।
দলটির মেয়রপ্রার্থী আবদুল আওয়াল বলেন, 'সব বুথে না পারলেও, যত বেশি সংখ্যক দেওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।'
তবে অর্ধেকের বেশি বুথে এজেন্ট পাঠানোর চেষ্টা রয়েছে জাতীয় পার্টির। জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, 'প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে সব বুথে এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১ হাজার ৭৩২টি বুথের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ বুথে এজেন্ট দেওয়া হবে।'
এছাড়া শুধু ভোটকেন্দ্রগুলোতে একজন করে পোলিং এজেন্ট দেওয়া হবে বলে জানান জাকের পার্টির মেয়রপ্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক।
ঝুঁকিপূর্ণ ৫৬ শতাংশ কেন্দ্র
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের 'ঝুঁকিপূর্ণ' কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫৬ শতাংশ কেন্দ্রই 'ঝুঁকিপূর্ণ'। এর মধ্যে ৫টি ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩টি ওয়ার্ডে সবগুলোই রয়েছে ঝুঁকির বাইরে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওই ওয়ার্ডগুলোর আওতায় ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। এবার নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রকে 'গুরুত্বপূর্ণ' (ঝুঁকিপূর্ণ) ও ১২৮ টি কেন্দ্রকে 'সাধারণ' হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেএমপি।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, 'বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার এবং সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৭১টি মোবাইল পেট্রোল টিম, ২০টি অতিরিক্ত মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতিটি থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্স থাকবে। নির্বাচনের কাজে মোট ৪ হাজার ৮২০ জন পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৬৭ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন।'
২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নির্বাচনে দুই শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় ওই বছর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রও ছিল বেশি। সেবার প্রায় ৮১ শতাংশ কেন্দ্রকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ২৮৯টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৭৩২ টি।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সবগুলো ভোটকেন্দ্র।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব সিসি ক্যামরায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বিক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড রাখা হবে। যদি কোনো কেন্দ্রে বা কক্ষে অনিয়মের খবর পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিকভাবে তা দেখা যাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা তার নিজ কাযালয়ে বসে ও নির্বাচন কমিশনাররা ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে সার্বক্ষণিক ভোটের চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। কোনো ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হলে তা ক্যামেরাতে রেকর্ড থাকবে, যা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কোনো কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।'
এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ মেয়রপ্রার্থীর পাশাপাশি ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।