এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশে কর্মী ছাঁটাই
বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইলার ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম তার বাংলাদেশের অফিসে আবারও কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সাপ্লাই চেইনে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী তার কিছু কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিয়েছে।
এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ছাঁটাই হবেন ৪৬ জন। বাংলাদেশে এইচঅ্যান্ডএম অফিসের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার ফয়সাল রাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, "এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়া চলাকালীন, আমরা ভূমি আইন অনুসরণ করেছি এবং আমাদের সহকর্মীদের অধিকারকে যেন সম্মান করা হয়, তা নিশ্চিত করছি।"
ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগের সময় তিনি আরও জানান, "এই পরিবর্তনের কথা ২০২২ সালের শরতে আমাদের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনেই জানানো হয়েছিল।"
"আমাদের লক্ষ্য হলো, কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রোডাকশন টিমগুলোকে কাছাকাছি এনে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা," যোগ করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা জুলাই, ২০২৩ পর্যন্ত এইচঅ্যান্ডএম-এ কর্মরত থাকবেন।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব চলাকালীন বাংলাদেশের অফিস থেকে আরও ১০১ জন কর্মী ছাঁটাই করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র বলছে, কর্মী ছাঁটাই সত্ত্বেও এই পদক্ষেপটি ক্রেতা ও সরবরাহকারীর মধ্যে একটি সত্যিকারের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সূত্রের তথ্যমতে, এইচঅ্যান্ডএম এখন থেকে আর পণ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রণ (কোয়ালিটি কন্ট্রোল- কিউসি) যাচাইয়ের কাজ করবে না; সাপ্লাই চেইনে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে প্রক্রিয়াটি এখন সরবরাহকারীর ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
এর আগে, পণ্যের শতভাগ কিউসি যাচাই এইচঅ্যান্ডএম কর্মকর্তাদের দ্বারাই পরিচালিত হতো।
সংশ্লিষ্টদের মতে, গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের ২৫০টি কারখানা থেকে পোশাক সংগ্রহ করে আসছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম। সংগ্রহকৃত এই পোশাক পণ্যের বার্ষিক মূল্য ৩ বিলিয়নেরও বেশি।
আগামী দিনগুলোতে কোম্পানির সাপ্লাই চেইন সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে ফয়সাল রাব্বি বলেন, "আমরা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মূল্যায়ন করি এবং আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা বজায় রাখি, যাতে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে আমরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারি।"
"আমরা আমাদের সোর্সিং মার্কেটে স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গির পাশপাশি আমাদের দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাকেও গুরুত্ব দেই, তাই এটি আমাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে না," যোগ করেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এইচঅ্যান্ডএম ধীরে ধীরে তার ব্যবসার আকার কমিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন ছোট-মাঝারি কারখানা থেকে অর্ডার কমিয়ে বড় কারখানাগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
তাদের আশঙ্কা, কিউসি টিম একেবারে বাদ দিয়ে এবং মার্চেন্ডাইজিং টিমের পরিসর কমিয়ে কোম্পানির সরবরাহকারীর তালিকাকে আরও ছোট করতে পারে এইচঅ্যান্ডএম।
তবে এ ধরনের সম্ভাবনার কথা ঠিক নয় জানিয়ে ফয়সাল রাব্বি বলেন, এ ধরনের কোনো পরিবর্তন কোম্পানির চলমান রূপান্তর পরিকল্পনায় নেই।
"আমাদের সোর্সিং কৌশলে পরিবর্তন আনার কোনো পরিকল্পনা নেই," বলেন তিনি।
এইচঅ্যান্ডএম'র এক কর্মকর্তা জানান, যেসব কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে স্থানীয় কিছু কোম্পানিতে চাকরি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই কোম্পানিগুলো সাবেক এইচঅ্যান্ডএম কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে উপকৃত হবে; কারণ তাদের এইচঅ্যান্ডএম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।