আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ: অধিকাংশ কারখানায় ছুটি ঘোষণা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ায় গত ৩ দিন ধরে চলতে থাকা শ্রমিক বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর আজ (১ নভেম্বর) চতুর্থ দিনে আশুলিয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। তবে এলাকার অধিকাংশ কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সকাল ৮টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়াসহ নিশ্চিন্তপুর ও এর আশেপাশের এলাকার ৫/৬টি পয়েন্টে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকালে জামগড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টার পর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শ্রমিক বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে শিল্প পুলিশ সদস্যরা এসব শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আজকে পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক রয়েছে। ৫/৬ টি পয়েন্টে শ্রমিকরা ইট পাটকেল ছুঁড়ে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে কয়েক রাউন্ডে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ছাড়া সামগ্রিকভাবে আশুলিয়া আজ শান্ত।"
এদিকে, গত কয়েকদিন যাবত চলতে তাথা টানা শ্রমিক আন্দোলনের জেরে আজ আশুলিয়ার অধিকাংশ কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে কারখানার গেইটে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে।
এমনই একটি কারখানা ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেডের নোটিশে বলা হয়েছে, 'আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণ অত্র কারখানার সকল বিভাগের কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।'
কয়েকটি নোটিশে বলা হয়েছে, 'কারখানা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ বুধবার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) সকাল থেকে কারখানার কার্যক্রম সচল থাকবে।'
মঞ্জুরুল হক নামে নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেডের একজন কর্মী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ৩০ অক্টোবর থেকে আমরা বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে ছিলাম। গত দুই দিন কারখানা চালু থাকলেই আজ অফিসে আসার পর কর্তৃপক্ষ আমাদের চলে যেতে বলেছে।"
"পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ," যোগ করেন তিনি।
এসময় এই শ্রমিক আরও বলেন, "আমি ১১ বছর ধরে গার্মেন্টসে কাজ করছি। পরিবার নিয়ে বাইপাইলে আছি। গতমাসের বেতন এখনো পাইনি। মাসের শুরুতে অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কবে নাগাদ পাবো তার ঠিক নেই। এখন পরিবার নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।"
সকাল থেকে এ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সাজোয়া যান, জল কামানসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এছাড়াও, বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এলাকার বিভিন্ন সড়কে মোটারসাইকেল নিয়ে লাঠি হাতে শোডাউন দিতে দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের।
সকালে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, "গত দিনগুলোর চেয়ে আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। অনেক কারখানা চলছে, কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।"