দেশে প্রথমবারের মতো ওটি-ক্যাথল্যাব থেকে দূর-নিয়ন্ত্রিত রোবটের মাধ্যমে হার্টের রিং পরানো হলো
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ওটি-ক্যাথল্যাব থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত রোবটের মাধ্যমে হৃদ্যন্ত্রের রক্তনালিতে নিখুঁতভাবে রিং পরানো হলো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। গত ২৮ জানুয়ারি দুইজন রোগীর হৃদযন্ত্রে রিং পরানো হয়, রোগীরা এখন সুস্থ আছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হারুন উর রশিদ (৫৫) ও লিটন কর্মকার (৪৫) নামে দুজন রোগীর হার্টের মূল রক্ত নালিতে ৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার দূরনিয়ন্ত্রিত রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনামূল্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীর ধমনীতে রিং স্থাপন করার প্রস্তাব দিলে রোগী ও তাদের স্বজনেরা তাতে সাড়া দেয়।
২৮ জানুয়ারি জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ক্যাথল্যাবে থাকেন রোগী। হাসপাতালের ৮ম তলার কনফারেন্স রুমে স্থাপিত রোবটিক কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে রোবটিক দলের প্রধান ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার নিখুঁত ভাবে ২ জন রোগীর হার্টে সফলভাবে রিং পরান। বিনামূল্যে রোগীদের এ রিং পরানো হয়।
পুরো অপারেশন প্রক্রিয়াটি উদ্বোধন ও প্রত্যক্ষ করেন জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন ও অধ্যাপক আজাদ সহ অন্যান্য চিকিৎসকরা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অত্যাধুনিক দূর নিয়ন্ত্রিত বা অপারেশন থিয়েটার ক্যাথল্যাবের দুর থেকে রোবটিক ব্যবহার করে হার্টে রিং পরানোর মধ্য দিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এশিয়া মহাদেশে ৩য় দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। এর আগে ভারত ও চীন এই ধরনের অপারেশন করেছে।
দূর নিয়ন্ত্রিত রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির এই প্রক্রিয়ায় রোবটের একটি হাত থাকে ক্যাথল্যাবে। আরেকটি থাকে কন্ট্রোল সেকশনে যা মূল কার্ডিওলজিস্ট ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে ৩ টি মনিটর আছে। ১ টি দিয়ে রিং পরানো প্রক্রিয়া রিয়েল টাইমে প্রত্যক্ষ করা হয়, দ্বিতীয়টি দিয়ে রোগীর ব্লাড প্রেসার, পালস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও ইসিজি দেখার মাধ্যমে রোগীকে রিং পরানোর সময়ের শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তৃতীয়টি দিয়ে ক্যাথল্যাবে অবস্থিত টিমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
হারুন উর রশিদ ও লিটন বর্তমানে ভালো আছেন এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তার বিশেষায়িত টিম হৃদরোগ আক্রান্ত দুজন রোগীর প্রধান ধমনীতে বিনামূল্যে রোবটিক পদ্ধতিতে রিং পরানোর মাধ্যমে এই যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতিটির ১ম পর্যায়ের কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। তখন রোগী ছিল ক্যাথল্যাবে আর ডা. প্রদীপ কর্মকার ছিলেন একই তলার কন্ট্রোল রুমে।