হবিগঞ্জে আরেকটি নতুন শিল্পপার্ক করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ নামে নতুন একটি শিল্প হাব তৈরি করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল।
৪০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য নতুন শিল্পপার্কটিতে ২০২৪ সালের শুরুতেই উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে ৩০০ একর জমির ওপর হবিগঞ্জে আরও একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে গ্রুপটির, যা নতুন হাবটির থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ এ এরইমধ্যে ওপাল গ্লাসওয়্যার উৎপাদনের জন্য তিনটি ও কর্কশিট উৎপাদনের জন্য একটি লাইন স্থাপনের কাজ শেষের দিকে রয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষে এ কারখানার উৎপাদন শুরু হবে বলেও নিশ্চিত করেছে কোম্পানি সূত্র।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মাটি ভরাটসহ ভৌত কাজের ২৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সিইটিপির কাজও শেষ হয়েছে। ওপাল গ্লাসওয়্যার এবং কর্কশিটের কারখানার জন্য চারটি ভবনের কাজও শেষ। মেশিনারি স্থাপন শেষে জানুয়ারিতেই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা যাবে। সবকিছু শেষ করে মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে।"
তিনি বলেন, দুটি কারখানা উদ্বোধন হলে প্রাথমিকভাবে সেখানে ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে পুরো পার্কের কাজ কমপ্লিট হলে কর্মসংস্থানের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে, নতুন দুটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
নতুন শিল্পপার্কে বিনিয়োগে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, "প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। ইক্যুইটি এবং লোনের মাধ্যমে এ অর্থের সংস্থান করা হবে।"
ওপাল গ্লাসওয়্যারের বাজার দখল
মধ্যবিত্তের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে ওপাল গ্লাসওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে ওপাল গ্লাসওয়্যারের বার্ষিক বাজার আনুমানিক ১,২০০ কোটি টাকা এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশেরও বেশি।
বর্তমানে এই মার্কেটের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছে নাসির ওপালওয়্যার।
এছাড়া, আমদানিকৃত পণ্যের ব্যাপক বাজার রয়েছে। মূলত চীন থেকেই করা হয় আমদানি।
প্রাণ আরএফএল ছাড়াও আকিজ এবং বেঙ্গল গ্রুপের এ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির আশাও করছে প্রাণ-আরএফএল।
তাছাড়া, দেশে কর্কশিট উৎপাদনে আরএফএলই এখনো পর্যন্ত বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। পচনশীল দ্রব্য, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইটেমে কর্কশিটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে গ্রুপটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কুমিল্লা কারখানায় কর্কশিট উৎপাদিত হয়। চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-২ এ আরেকটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তারা।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল-এর বার্ষিক টার্নওভার আনুমানিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার আসে রপ্তানি থেকে; এই রপ্তানি আয়ের আবার প্রায় ২০ শতাংশ আসে শুধু ভারত থেকেই।
মোট ৩০০টি ব্র্যান্ডের অধীনে দেশের ৩১টি জায়গায় ৬,৩০০ ধরনের পণ্য উৎপাদন করে গ্রুপটি। বর্তমানে ১৪৫টি দেশে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রায় ২৫,০০০ কর্মী কর্মরত রয়েছেন; এই সংখ্যাসহ গ্রুপের মোট কর্মীর সংখ্যা এখন ১.৪৫ লাখ।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, আনুমানিক ১ লাখ কৃষক সরাসরি গ্রুপে পণ্য সরবরাহ করছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও আইটেম– যা আগে আমদানি করা হতো– হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মূলত সে ধরনের পণ্যই তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, বৈশ্বিক উচ্চ চাহিদা রয়েছে, এমন পণ্যও উৎপাদিত হচ্ছে শিল্প পার্কটিতে।
এই পার্কে দেশের বৃহত্তম প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট রয়েছে। এছাড়াও, কোকা-কোলা এবং জিলেটের মতো সুপরিচিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি করছে।
শিল্প পার্কটি বর্তমানে ৪৭টি উৎপাদন লাইন পরিচালনা করছে– যেখানে জুস, কোমল পানীয়, ক্যান্ডি, তরল গ্লুকোজ, বিস্কুট, মিষ্টান্ন, ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক তার, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, এমএস এবং জিআই পাইপ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী।