এমভি আবদুল্লাহর কাছে ইইউ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, তবে চলবে না অভিযান
ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে জলদস্যুরা। আর এটির কাছেই মোতায়েন রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।
পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করার শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজের মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সামরিক অভিযানে সম্মতি দেয়নি।
ইইউ-এর নৌবাহিনী এর এক্স অ্যাকাউন্টে শুক্রবার (২২ মার্চ) একটি ভিডিও এবং ৩টি ছবি প্রকাশ করেছে। সেগুলোতে দেখা গেছে, তাদের অবস্থান থেকে এমভি আবদুল্লাহ মাত্র কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত। এছাড়া যুদ্ধজাহাজটির একটি হেলিকপ্টারকে বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজের কাছাকাছি অবস্থান দিয়ে উড়তে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ যুদ্ধজাহাজটি মোতায়েনের পর থেকে জিম্মি থাকা নাবিকদের ওপর চাপ বেড়েছে। সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার মাঝে জিম্মি জাহাজের কাছাকাছি যুদ্ধজাহাজ অবস্থা করা 'শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক'।
এমভি আবদুল্লাহ'র মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ইইউ'র যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।'
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধান লক্ষ্য নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। তাই কোনো ধরনের অভিযান বা সহিংস কর্মকাণ্ডের পক্ষে আমরা নই।'
নাবিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে মালিকপক্ষের সমর্থন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'কোনো অভিযানের পক্ষে আমরা নই। বাংলাদেশ সরকারও একই নীতিতে আছে।'
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন মনে করেন ইইউ'র যুদ্ধজাহাজ জিম্মি জাহাজের কাছাকাছি যাওয়া বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক।
টিবিএসকে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের পতাকবাহী জাহাজটি দেশের মাটির মতো। এখানে কোনো ধরনের অভিযান চালাতে হলে বাংলাদেশের অনুমতি লাগবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কোনো ধরনের অভিযানের অনুমতি দেয়নি।'
'এর আগে বাংলাদেশি নাবিকেরা নিজেদের কেবিনে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধজাহাজ পেট্রোলিং শুরু করার পর থেকে গত দুদিন ধরে সবাইকে এক জায়গা জড়ো করে রেখেছে জলদস্যুরা। এটি নাবিকদের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করছে,' বলেন তিনি।
গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জলদস্যুরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রথমবার যোগাযোগ করে।
দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, 'আলোচনা এখনো অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে প্রায় ১০০ দিন লেগেছিল। আমরা আশা করছি, তার চেয়ে অনেক কম সময়ে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।'
এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি নামক একটি জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালি জলসদ্যুরা। ওই সময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ।