আজ স্বজনদের কাছে ফিরছেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
আজ (১৪ মে) স্বজনদের কাছে ফিরছেন সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক।
এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই বিকাল ৪টায় স্বজনদের কাছে ফিরে যাবেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া নাবিকরা।
এর আগে, গত সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টায় কুতুবদিয়া অ্যাংকরেজ এরিয়ায় নোঙ্গর করে এমভি আবদুল্লাহ। ওইদিন ২৩ নাবিকের নতুন একটি টিম চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে আটটায় কুতুবদিয়ায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে পৌঁছায়।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম টিবিএসকে বলেন, "এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ পরিচালনায় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় কুতুবদিয়া ২৩ নাবিকের একটি টিম পৌঁছেছে। নতুন নাবিকরা সোমবার রাতেই এমভি আবদুল্লাহ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, "এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক ১৪ মে মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় এম.ভি জাহানমণি-৩ লাইটার জাহাজযোগে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে আসবেন। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এনসিটি-১ এ নাবিকদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। সেখানে নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত থাকবেন।"
এদিকে, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি ও বাড়ি ফেরার আনন্দে নানান আয়োজন করছেন নাবিক পরিবারের সদস্যরা। কীভাবে তাদেরকে বরণ করবেন, তা নিয়ে রয়েছে নানা পরিকল্পনা।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিক আইনুল হক অভির মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, "সন্তানকে ফিরে পাচ্ছি এটি আমার জীবনের বড় পাওয়া। সন্তানকে কখন বুকে জড়িয়ে নেব সেই অপেক্ষায় আছি। তার প্রিয় খাবার শুটকি ভর্তা, চিংড়ি মাছ রান্না করছি।"
তিনি বলেন, "জিম্মি হওয়ার পর সন্তানের জীবিত ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই আশা পূরণ হতে চলেছে। দ্রুত সময় সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করায় জাহাজ মালিক এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।"
এদিকে এক অডিও বার্তায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার আবদুর রশিদ জানান, জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন।
জাহাজের ২৩ নাবিক হলেন— জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।
জাহাজটিতে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর রয়েছে। কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু চুনাপাথর লাইটার জাহাজে খালাস করা হবে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বন্দর জলসীমায় আনা হবে। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে।
গত ১২ মার্চ ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার সময় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়। জলদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়ে ১৪ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল।
এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি জাহাজও সোমালি জলসদ্যুরা ছিনতাই করেছিল। ওইসময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।