কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতা: ৫৮৬ কোটি টাকার দুই সড়ক প্রকল্পকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারের পর্যটন জোন হিসেবে পরিচিত কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকায় আগে কখনও জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। তবে গত তিন মাসে চারবার জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে এ এলাকা।
সর্বশেষ শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা এবং মার্কেট এলাকা। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের পাঁচ কিলোমিটার প্রধান সড়কও পানিতে তলিয়ে যায়।
সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এবং বৌদ্ধমন্দির সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের দোকানপাট, অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে যায়। ফলে হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ রকম জলাবদ্ধতা এর আগে কখনও দেখেননি কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
তার মতে, এর জন্য দায়ী চারলেনের সড়ক নির্মাণ। সড়কটি নির্মাণের সময় এটিকে আগের চেয়ে অস্বাভাবিক উঁচু করা হয়েছে এবং নালার অংশ ছোট করে ফেলা হয়েছে।
'নালার ওপর স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় সড়কের পানি নালা দিয়ে বের হতে পারছে না। এছাড়া পাহাড় কাটার ফলে মাটি নেমে এসে নালা ভরাট হয়ে গেছে, যা পরিষ্কার করার সুযোগ রাখা হয়নি,' বলেন তিনি।
ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সাগর বা নদীতে নামতে না পারায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আয়াছুর রহমান বলেন, লাবণীর মোড় থেকে কলাতলী হয়ে লিংক রোডের মতো শহরের প্রধান সড়কও একই ধরনের জলাবদ্ধতার শিকার।
প্রধান সড়কটি সংস্কারে তিন বছরের বেশি সময় লেগেছে। সড়কটি আগের অবস্থার চেয়ে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে, ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলো নিচু হয়ে পড়েছে।
'নালাগুলো ময়লায় ভরে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই, যার কারণে পুরো শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে,' বলেন এ আইনজীবী।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকাও সড়ক নির্মাণকে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সড়কগুলো অস্বাভাবিক উঁচু করা এবং স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে ফেলার ফলে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।
লাবণীর মোড় থেকে কলাতলী-লিংক রোড পর্যন্ত চারলেনের সড়কটি নির্মাণ করেছে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ সড়কটি উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর।
আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, মাঝখানে ১০ ফুট ডিভাইডার, দুপাশে ছয় ফুট করে ড্রেনসহ সড়কটি প্রশস্ত হয়েছে মোট ৭১ ফুট।
অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
২৯৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এবং উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।
মোটেল লাবণী মার্কেটের ব্যবসায়ী সিফাত জানান, গত তিন মাসে চারবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। সড়কের নালা বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো উপায় নেই।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি রয়েছে।