আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে আজ বন্ধ ৪৯ কারখানা
ঢাকার আশুলিয়ায় বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি করে ২২ হাজার টাকা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন একাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে আজ (শনিবার) বন্ধ রয়েছে অন্তত ৪৯টি কারখানা।
সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এদিকে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আশেপাশের বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের ডাকাডাকি করে ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক্ষেত্রে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিয়ে আসলে ওই অঞ্চলের অন্তত ৮ থেকে ১০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
আন্দোলনরত লুসাকা গ্রুপের বেক নীট লিমিটেডের একজন শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ৯ই সেপ্টেম্বর মালিকপক্ষ কারখানার ২৭ জন শ্রমিকের নামে এবং অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে গত বৃহস্পতিবার কারখানা খুলে দেওয়ার পর মালিকপক্ষ জানায় তারা আমাদের কাছে মামলা প্রত্যাহার করে কপি হাতে হাতে দিয়ে দিবে। কিন্তু পরবর্তীতে আর তা দেয়নি। আজ সকালে কারখানায় এসে দেখি মালিকপক্ষ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আশেপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বের করে নিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।"
শিল্প পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সকালে লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করার পর জিরাবো এলাকার মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরাও সড়কে নেমে এসে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কয়েকদিন যবত বেতন বৃদ্ধি করে ২২ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছিল। এদের সাথে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যুক্ত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা বেলা ১১টা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছিল।
মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেডের আন্দোলনরত এক শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, "বেতন বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে আমাদের শ্রমিকরা আন্দোলন করছিল। আজ কারখানায় এসে দেখি মালিকপক্ষ ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার থেকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মালিকপক্ষের হয়ে আমাদের শ্রমিকদের মারধর করছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রমিকদের ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।"
তবে কোন শ্রমিককে বা কাকে কাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, এমন প্রশ্ন করলে সুনির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য দিতে পারেননি এই শ্রমিক।
এদিক বেলা ১২টা নাগাদ শিল্প সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আজ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে মোট ৪৯টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অর্থাৎ নো ওয়ার্ক, নো পে'র ভিত্তিতে ১২টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে কিংবা ছুটি আছে এমন কারখানার সংখ্যা ৩৭টি।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ কারখানার মধ্যে রয়েছে লুসাকা গ্রুপের বেক নীটওয়্যার লিমিটেড, বেক সোয়েটার লিমিটেড, মন্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড, এনভয় গ্রুপের এনভয় ফ্যাশন লিমিটেড, এনভয় ডিজাইন লিমিটেড, আঞ্জুমান ডিজাইন লিমিটেড, দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড।
এছাড়া স্ব-বেতনে কারখানা ছুটি আছে, কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে ম্যাংগোটেক্স লিমিটেড, গ্লোরিয়াস সান ফ্যাশন, সাউদার্ন গার্মেন্টস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট, স্কাইলাইন গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইলাইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, নিউএইজ গার্মেন্টস, সিডকো লিমিটেডসহ মোট ৩৭টি পোশাক কারখানা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা খোলা রয়েছে এবং শ্রমিকরাও শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। পরে লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলে তাদের কারনে আশেপাশের ৮ থেকে ১০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি ২২ হাজার টাকা করার দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে।"
"আমরা চেষ্টা করছি, শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে", তিনি যোগ করেন।
যদিও শিল্প পুলিশ বলছে, যেহেতু কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের কারনে কিছু কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, কাজেই দিনশেষে উৎপাদন বন্ধ থাকা এই কারখানার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।