আশুলিয়ায় অধিকাংশ কারখানা খোলা, বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকদের নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ
গতকালের মতো আজও (২ অক্টোবর) আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কিছু সংখ্যক কারখানা ব্যতীত অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। সকাল থেকে এসব কারখানায় কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা।
তবে সকালে শিল্পাঞ্চলের জিরাবো এলাকায় শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ থাকা টেক্স টাউন লিমিটেডের শ্রমিকরা কারখানা বন্ধ পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে এবং আশেপাশের কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করায়, জিরাবো পুকুরপাড় এবং কাঠগড়া এলাকায় ১২ থেকে ১৪টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশের একটি সূত্র।
ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হওয়া এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে: পিকার্ড বাংলাদেশ লি., সাউর্দান মিলেনিয়াম টেক্সটাইল লি., হেসং কোরিয়া লি., কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি প্রাইভেট লি., তাহারাত নিট কম্পোজিট লি., লেদারক্স ফুট ওয়্যার লি., এবং এভার ব্রাইট সোয়েটার লি।
শিল্প সূত্র জানায়, আজ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় মোট ৩৪টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে শুধু আঞ্জুমান ডিজাইন লিমিটেড।
এছাড়া ৩৩টি কারখানায় স্ববেতনে ছুটি রয়েছে, কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছেন।
এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে: জেনারেশন নেক্সট, স্কাইলাইন গার্মেন্টস, ইথিকাল গার্মেন্টস, টেক্স টাউন লিমিটেড, এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ম্যাগপাইন কম্পোজিট লিমিটেড, ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
অন্যদিকে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বাইপাস রোড এলাকায় পুরুষদের চাকরির দাবিতে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল মারলে অন্তত ২৬টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বের হয়ে যান বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
এর মধ্যে রয়েছে: ক্যাপিটাল ফ্যাশন লিমিটেড, ইউরো নীটওয়্যার, ইউরো জিন্স, দ্যাটস ইট ফ্যাশন, টিএম ফ্যাশন, ক্রাউন ফ্যাশন, টেকনো ফাইবার লিমিটেড, আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার, টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড।
সূত্রটি জানায়, সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় আজ ৪০৭টি কারখানা খোলা রয়েছে, বন্ধ রয়েছে ৩৩টি। গাজীপুরে ৮৭৬টি কারখানা চালু রয়েছে, বন্ধ রয়েছে ২৬টি।
নারায়ণগঞ্জে চালু রয়েছে ২০৯টি কারখানা, ডিএমপি এলাকায় ৩০২টি কারখানা এবং চট্টগ্রামে ৩৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। এই তিন অঞ্চলে কোনো কারখানা বন্ধ নেই।
টানা অবরোধ চলছে নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে
এদিকে গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে আশুলিয়ার বাইপাইলে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শ্রমিকদের টানা অবরোধের মুখে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে সড়কটি। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল এলাকা পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কখনও কখনও এই যানজট আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
অবরোধের স্থান থেকে বার্ডস গ্রুপের বিক্ষুব্ধ একজন শ্রমিক বলেন, "তিন দিন যাবত রাস্তায় আছি। এখনো মালিকের কোন সাড়া নেই। পুলিশ আমাদের বলছে, 'তোমরা মালিকের ঠিকানা দাও, আমরা গিয়ে তাকে নিয়ে আসবো।' আমরা মালিকের ঠিকানা কোথায় পাবো?"
আর কতক্ষণ সড়ক অবরোধ থাকবে– এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ শ্রমিক বলেন, "যতক্ষণ আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ।"
আরেকজন শ্রমিক বলেন, "৫০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কোন পক্ষে থেকে আমাদের সমস্যা সমাধান করা হয়নি। মালিকের কাছে অনুরোধ, আমাদের পাওনা দিয়ে দিন, আমরা চলে যাবো।"
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। মালিকপক্ষ ফোন অফ করে পালিয়ে আছে। আমরা শ্রমিক ভাইদের অনুরোধ করছি রাস্তাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, যাতে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি এবং আশা করছি, আজ দুপুর নাগাদ সমস্যার সমাধান হতে পারে।"
এর আগে, গতকাল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাইপাইল এলাকায় এবং ডিওএইচএস সামনে মহাসড়কের দুই পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা।
পরবর্তীতে ডিওএইচএসের সামনে থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ে গেলেও বাইপাইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট এক নোটিশে বার্ডস গ্রুপ কর্তৃপক্ষ জানায়, "রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোন প্রকার কাজ নেই। এর পরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। শত চেষ্টা করেও নতুন কোন কাজের অর্ডার সংগ্রহ করতে পারেনি, যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত।"
এমতাবস্থায় গত ২৮ আগস্ট থেকে গ্রুপটির আর এন আর ফ্যাশনস লি., বার্ডস গার্মেন্টস লি., বার্ডস ফেডরেক্স লি., এবং বার্ডস এ এন্ড জেড লি. এর সকল সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।