প্রতিপক্ষকে নিশানা করতে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অভিযোগ
জাতিসংঘের গুমসংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ ডব্লিউজিইআইডি (ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস) দাবি করছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ৬০০ জনকে গুম করেছে।
গত ৬ ডিসেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হালনাগাদ করা হয়েছে। সে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, গুম হওয়া বেশিরভাগকেই পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কিংবা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
তবে বেশ কয়েকজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং ৮৬টি নথিভুক্ত কেস রয়েছে যেখানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিণতি ও অবস্থান অজানাই রয়ে গেছে।
'বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের' বরাতে ডব্লিউজিইআইডি উল্লেখ করেছে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্যান্য ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থা এবং গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক একটি নিয়মিত হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে গুমের ব্যবহার হয়ে আসছে।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ আরও দাবি করেছে যে, সরকার বা রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সমালোচনা প্রতিরোধে সরকার গুমকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ সরকারকে লেখা এক চিঠিতে ডব্লিউজিইআইডি লিখেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সাজানো মামলার আসামি বানিয়ে গণগ্রেপ্তারের কৌশল নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ছাড়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে লোকজনকে তুলে নেওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং লাশ গুমের সাথে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সম্পৃক্ত ছিল।
সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের অভাবের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারা গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে চান না বা শুধু তখনই অভিযোগ গ্রহণ করেন, যখন সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়। এমনকি অভিযোগ নথিভুক্ত হলেও দৃশ্যত কোনো তদন্ত হয় না।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১০ তারিখ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়াও পৃথক এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ র্যাব, বেনজীর আহমেদ ও অন্য পাঁচজন সাবেক ও বর্তমান র্যাব কর্মকর্তার ওপর গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট, ইও ১৩৮১৮ এর অধীনে 'দায়িত্বপালনের সময়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের' দায়ে অভিযোগ আনে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপকৃত অন্যান্যরা হলেন-
• চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন; ডিজি, র্যাব (১৫ এপ্রিল, ২০২০ থেকে বর্তমান)
• খান মোহাম্মদ আজাদ; অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স), র্যাব (১৬ মার্চ, ২০২১ থেকে বর্তমান)
• তোফায়েল মুস্তফা সরওয়ার; সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স), র্যাব (২৭ জুন, ২০১৯ থেকে ১৬ মার্চ, ২০২১)
• মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম; সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স), র্যাব (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ থেকে ২৭ জুন, ২০১৯)
• মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান; সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স), র্যাব (২৮ এপ্রিল, ২০১৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)