ইউক্রেনজুড়ে নতুন করে তীব্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে রাশিয়া। শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমের শহরগুলোতে রুশ বাহিনী ৬০টি মিসাইল ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে ড্রোন আক্রমণও চালিয়েছে মস্কো। খবর বিবিসির।
এ আক্রমণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে পাঁচজন। মধ্য-ইউক্রেনের ক্রিভিহ রিহ-এ একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে। রুশ বাহিনীর এসব আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের অবকাঠামো।
রুশ আক্রমণে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের খারকিভসহ অন্যান্য অঞ্চল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেন বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাত বলেছেন, মোট ৬০টি মিসাইল ছুড়েছে রুশ বাহিনী।
রাশিয়া-ইউক্রেনের উত্তর সীমান্তের কাছাকাছি সুমি অঞ্চলের পাশাপাশি পোলতাভা এবং ক্রেমেনচুকের কেন্দ্রীয় শহরগুলোও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়া ১ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ইরানের তৈরি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেন অভিযোগ তুলেছে, তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোতে আক্রমণ চালিয়ে রাশিয়া শীতকালকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলা বাড়ালে 'মানবিক পরিস্থিতি আরও গুরুতর অবনতির দিকে যেতে পারে'। সেইসঙ্গে আরও মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, শহরের তিনটি এলাকায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরবরাহ প্রভাবিত হয়েছে। শহরের মেট্রোলাইনগুলোও এখন বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল এ সপ্তাহে বলেছিলেন, রুশ হামলায় সবগুলো তাপ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট হয়েছে এবং পানি সরবরাহ ও ঘর উষ্ণ রাখার ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে।
কিছু এলাকায় দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
দক্ষিণে জাপোরিঝঝিয়ায় পনেরোটি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উত্তর-পশ্চিমের ঝিতোমির অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, রাশিয়া একইসঙ্গে রকেট ও কামিকাজে ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ইউক্রেন সম্প্রতি যেসব দখলীকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এই আক্রমণগুলো চালিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়া এই সপ্তাহে হামলা জোরদার করেছে কেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিয়েভের কয়েক মাসের অনুরোধের পর অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স মিসাইল পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনে গোলাগুলিতে দুজন মারা গেছেন। তবে কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষা বুধবার রাজধানীকে লক্ষ্য করে ছোড়া ১৩টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়া আপাতত আক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে দিয়েছিল। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া সম্ভবত আগামী বছরের শুরুর দিকে বড় পরিসরে নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি দি ইকোনমিস্টকে বলেন, 'রুশরা প্রায় ২ লাখ নতুন সৈন্য প্রস্তুত করছে। আমি নিশ্চিত, ওরা কিয়েভে আরেকটি হামলা চালাতে পারে।'