সু-৩৫’র অলক্ষ্যে আঘাতে হানতে সক্ষম এফ-৩৫, তবে কাছে এলে রেহাই পাবে না
এমনিতে লকহিড মার্টিনের তৈরি মার্কিন বিমানবাহিনীর স্টেলথ যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ লাইটনিং টু ও সুখোই নির্মিত রাশিয়ান বিমানবাহিনীর সু-৩৫ ফ্ল্যাংকার-ই কখনো সরাসরি আকাশযুদ্ধে (ডগফাইট) মুখোমুখি হবে না হয়তো। কিন্তু ইরানের সু-৩৫ কেনার পর ইসরায়েলের এফ-৩৫ আডিরের সঙ্গে এর মোলাকাত হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াতে পারে যদি এমনটা হয়? বিস্তারিত জানিয়েছে বুলগেরিয়ানমিলিটারি ডটকম।
তবে সবার আগে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে। দুটো বিমানই নকশা ও যুদ্ধক্ষমতায় যেমন একে অপরের চেয়ে ভিন্ন, তেমনিভাবে এগুলো তৈরিও করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে।
এফ-৩৫'কে পুরোপুরি ফাইটার বলাও যায় না, বরং এটি একটি স্ট্রাইক এয়ারক্রাফট। কারণ এর উদ্দেশ্য শত্রু বিমানের সঙ্গে লড়াই করা নয়, বরং আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল ব্যবহার করে ভূমিতে আক্রমণ চালানো।
তাহলে এ বিমান যখন সু-৩৫'র মুখোমুখি হবে, তখন দৃশ্যপট কীরকম হতে পারে তা কল্পনা করা যাক। প্রথমত, এফ-৩৫ ও সু-৩৫'র মধ্যে এফ-৩৫'র শত্রুবিমান চিহ্নিত করার ক্ষমতা বেশি।
কারণ এফ-৩৫'র রয়েছে খুবই উন্নতমানের সেন্সর। সোজা কথায়, সু-৩৫ কিছু টের পাওয়ার অনেক আগেই এবং অনেক দূর থেকেই এটির অস্তিত্ব জেনে যাবে এফ-৩৫। এমনকি এফ-৩৫'র পক্ষে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইল ছুঁড়ে সু-৩৫'র অজান্তেই এটিকে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে রাশিয়ান পাইলট হয়তো টেরই পাবেন না কোথা থেকে, কোন মুহূর্তে তাকে লক্ষ্য করে কেউ আঘাত হেনেছে।
কিন্তু এমন ফারাক কেন? এর পেছনে রয়েছে দুই বিমানের রাডারের ক্ষমতা। তার আগে জানতে হবে রাডার ক্রস সেকশন বা আরসিএস-এর মানে কী। আরসিএস দ্বারা কোনো বস্তু একটি রাডারে কত সহজে ধরা পড়বে তা বোঝায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, কোনো টার্গেটের আরসিএস হচ্ছে একটি রাডার ওই টার্গেটের কতটুকু অংশ দেখতে পারে তা।
সু০৩৫ ইরবিস-ই পেসা রাডার ব্যবহার করে। এ রাডারের কাগজেকলমে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে শক্রুবিমান চিহ্নিত করতে পারার কথা। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় রাডারটির রেঞ্জ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯৫ কিলোমিটারে। অর্থাৎ আকাশে সু-৩৫'র রাডার দক্ষতা ৫০ শতাংশ কমে যায়। আর এর কারণ হচ্ছে ইরবিস-ই রাডারকে নকশা করা হয়েছে তিন ঘনমিটার আরসিএসে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করার জন্য।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও ছোট – এক বর্গ মিটার আরসিএস নিয়ে ফাইটার বিমানের নকশা করা হয়েছে। আর এমনটা যদি হয়, সেক্ষেত্রে সু-৩৫ কেবল ৪৫ কিমি দূর থেকে এফ-৩৫'কে শনাক্ত করতে পারবে। কারণ এফ-৩৫'র আরসিএস খুবই কম, মাত্র ০.০০১ বর্গমিটার।
অন্যদিকে, সু-৩৫'কে ১৫০ কিমি দূর থেকে শনাক্ত করতে পারার কথা এফ-৩৫'র। তো, অনেক আগে থেকেই মিসাইল মেরে দিলেও যে প্রথম দানেই এফ-৩৫'র পাইলট বাজিমাত করবেন, তা কিন্তু সবসময় নয়। কারণ, যুদ্ধবিমান হিসেবে সু-৩৫'র ম্যানুভার করার চমৎকার ক্ষমতা ও মিসাইল আক্রমণ ঠেকানোর দুর্দান্ত কাউন্টারমেজার রয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, কিছু রাশিয়ান সু-৩৫-এ এইম-১২০ অ্যামরাম মিসাইলের বিরুদ্ধে আর্লি ওয়ার্নিং রিসিভার সংযুক্ত করা হয়েছে। নকল জ্যামিংয়ের জন্য স্মার্ট জ্যামার ব্যবস্থাও রয়েছে সু-৩৫-এর।
এফ-৩৫ দূর থেকে আক্রমণ করলেও ম্যানুভারিংয়ের মাধ্যমে মিসাইল এড়িয়ে যেতে পারে সু-৩৫। এ সময়টুকুতে দুটো যুদ্ধবিমানের মধ্যে দূরত্ব কমতে থাকে। সু-৩৫'র রাডারের ১২০ ডিগ্রি অ্যাওয়ারনেস রয়েছে। কাছাকাছি এলে সহজেই এফ-৩৫'কে রাডারের জালে পেয়ে যায় সু-৩৫।
এফ-৩৫ যেমন দূর থেকে ছোবল হানতে পারে, তেমনি সু-৩৫'কে বানানো হয়েছে দৃশ্যমান পাল্লার মধ্যে যুদ্ধ করার জন্য। প্রায়ই সু-৩৫ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরপর দুটো মিসাইল নিক্ষেপ করে। প্রথমটি সক্রিয় রাডারের মাধ্যমে, পরেরটি অবলাল টার্গেটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে। আর কাছাকাছি অবস্থানে দুটো মিসাইল ঝেড়ে ফেলা এফ-৩৫'র জন্যও খুব একটা সহজ কাজ নয়।
আবার আরেকটি পরিস্থিতির কথা কল্পনা করা যাক। ধরা যাক, এফ-৩৫'র মিসাইলটি সু-৩৫'কে আঘাত হানতে ব্যর্থ হলো। এরপর এফ-৩৫ পাইলট চাইলেন পালিয়ে যেতে। সেক্ষেত্রে এটি রাশিয়ান পাইলটের জন্য আরও বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
কেন? পেছনের দিকে এফ-৩৫'র আরসিএস ০.০১ বর্গমিটারের চেয়ে অনেক বেশি। এর অর্থ, সু-৩৫'র ইবরিস-টি রাডার সহজেই সামনের টার্গেটের ওপর লক করতে পারবে।
এফ-৩৫ একটি স্ট্রাইক যুদ্ধবিমান
এফ-৩৫ কে স্ট্রাইক ফাইটার হিসেবে বানানোর কারণেই হয়তো আমরা কখনো এ দুই অত্যাধুনিক জঙ্গিবিমানের মধ্যে কোনো ডগফাইট দেখব না। দুটো বিমানই আকাশে নিজেদের মতো করে আলাদা সুবিধা পাবে সম্মুখযুদ্ধের সময়। কিন্তু আবারও এগুলোর উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রাখতে হবে।
তাই, ভূমিতে আক্রমণের জন্য সুদক্ষ হলেও ডগফাইটের আভাস পেলে হয়তো এড়িয়ে যাওয়াকেই বেছে নেবেন একজন এফ-৩৫ পাইলট। কারণ তাকে তার বিমান ও গোলাবারুদের দামের কথাও মাথায় রাখতে হবে। শুধু শুধু ঝুঁকি না নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।