বৃদ্ধের দেশে পরিণত হচ্ছে জাপান, ১০ জনের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ বছরের বেশি
জাপানে ৮০ বছর পেরোনো মানুষের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাপান সরকার এ তথ্য জানিয়েছে। এমনিতেই জাপানে দ্রুত প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার মধ্যে সাম্প্রতিক এই খবর সরকারকে আরও ভাবিয়ে তুলেছে।
জাপানে কোনো নাগরিকের বয়স ৬৫ বা এর বেশি হলে তাঁদেরকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাপানে এই বয়সসীমার মানুষ রয়েছেন ২৯ দশমিক ১ শতাংশ- যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর জাপানে 'রেসপেক্ট ফর এইজড ডে' বা প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন দিবস পালন করা হয়। এ দিনটিকে সামনে রেখে জাপান সরকার প্রবীণদের এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
জাপানে একদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে জন্মহার কমছে এবং কর্মশক্তি সংকুচিত হয়ে আসছে- যা প্রবীণদের পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
১৯৮০র দশকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার পর থেকে জাপানের জনসংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য নারীদের প্রজনন বছরগুলোতে গড় সন্তান জন্মের হার জনপ্রতি ২.১ থাকা প্রয়োজন হলেও, জাপানে তা কমে মাত্র ১.৩-এ নেমে এসেছে।
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাপানে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার বেশি, যা বিশ্বের তৃতীয়-বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
এছাড়াও, জাপান বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ুর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, যে কারণে দেশটিতে প্রবীণ জনসংখ্যা আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।
ক্রমবর্ধমান শ্রম ঘাটতি মোকাবিলায় এবং স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার আশায়, জাপান সরকার গত এক দশকে প্রবীণ এবং ঘরে অবস্থানরত মায়েদের পুনরায় কাজে যোগদান করতে উৎসাহিত করেছে।
আর সরকারের সেই বার্তা কিছুটা কাজেও দিয়েছে; জাপানে বর্তমানে রেকর্ড ৯.১২ মিলিয়ন প্রবীণ কর্মী রয়েছেন এবং টানা ১৯ বছর ধরে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে জাপানের জাতীয় কর্মশক্তির ১৩ শতাংশের বেশি হলেন ৬৫ বছর বা তারও বেশি বয়সী প্রবীণরা। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে জাপানে প্রবীণদের কর্মসংস্থানের হার শীর্ষে রয়েছে।
কিন্তু প্রবীণদের কাজে ফিরিয়ে আনাই জাপানের জনসংখ্যা সংকটের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সতর্ক করে বলেছিলেন, 'আমাদের জাতি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে পারে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, শিশুদের লালন-পালনসংক্রান্ত সহায়তা জাপান সরকারের কাছে 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি' এবং বিষয়টি সমাধানে আর দেরি করা যাবে না।
এদিকে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং তাইওয়ানও একই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক অসন্তোষের মুখে তরুণদের সন্তান নিতে আগ্রহী করে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে দেশগুলো।