বেদনাদায়ক বিলম্বের পর ১৩ ইসরায়েলি ও ৩৯ ফিলিস্তিনি কয়েদির মুক্তি
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গতকাল শনিবার দ্বিতীয় ধাপে ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ৩৯ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে বন্দি বিনিময়ে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ায় জিম্মিদের মুক্তির অপেক্ষায় থাকা পরিবার ও স্বজনদের উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ১৩ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। হামাস থাইল্যান্ডের চারজন জিম্মিকেও মুক্তি দিয়েছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চারদিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ওই দিন প্রথম ধাপে নির্ধারিত সময়ে বন্দি বিনিময় করে উভয়পক্ষ।
গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় মিসর ও গাজা সীমান্তে রেড ক্রসের হাতে ইসরায়েলি বন্দিদের হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু এতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। পরে জরুরি এক আলোচনার পর উভয়পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস জানায়, বন্দি বিনিময় বিলম্ব হওয়ার জন্য উত্তর গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ ও ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বাছাই সংক্রান্ত কিছু ইস্যু ছিল।
হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেছেন, শুক্রবার থেকে মোট ৩৪০টি ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ট্রাক গাজায় এসেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজায় পৌঁছেছে মাত্র ৬৫টি ট্রাক। চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল যে পরিমাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছিল, সে হিসেবে এটি অর্ধেকেরও কম। তবে ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েল উত্তর গাজাকে একটি রণক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে ত্রাণ সহায়তার যাবতীয় দায় জাতিসংঘের।
পরে ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাতারের একটি বিবৃতি নিশ্চিত করে জানান যে এ বিরোধের মীমাংসা করা হয়েছে।
হামাস ইসরায়েলের সাথে তাদের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার জন্য মিসর ও কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
যুদ্ধবিরতির এ চুক্তির আওতায় চার দিনে নারী ও শিশুসহ ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে দেড়শ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এর আগে গত বুধবার কাতারের মধ্যস্থতায় চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় সংঘাতরত পক্ষগুলো।
ইসরায়েলি সরকার বলেছে, প্রতিদিন অন্তত ১০ জন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হলে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো যেতে পারে। তবে ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে চুক্তিটি কেবল অস্থায়ী।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা হামাস। এতে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৪০ জন।
জবাবে ইসরায়েলও হামলা শুরু করে। হামাস বলছে, টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে, যার মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকার মানুষের জন্য ব্যাপক সহায়তা বিশেষ করে খাদ্য, পানি ও জরুরি ওষুধ সামগ্রী প্রয়োজন।
ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীকে ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র 'সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মধ্য তেল আবিবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সমাবেশের জন্য জড়ো হয়। তারা 'বন্দিদের ফিরিয়ে আনো' বলে স্লোগান দেন। তাদের আশা অস্থায়ী এ যুদ্ধবিরতি দীর্ঘ হবে।
ইসরায়েল সরকার জানায়, শনিবার মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে অর পরিবারের দুই কিশোর, ওয়েইস পরিবারের ৫৩ ও ১৮ বছর বয়সী দুই সদস্য, আভিগদোরি পরিবারের ৫২ ও ১২ বছর বয়সী দুজন এবং হারান ও শোহাম পরিবারের তিন বছর ও আট বছর বয়সী দুই শিশুসহ চার সদস্য। মুক্তি পাওয়া অন্য তিনজনের মধ্যে আইরিশ-ইসরায়েলি নয় বছর বয়সী শিশু এমিলি হ্যান্ড রয়েছে।
গাজায় জিম্মিদের মধ্যে রয়েছেন ৭৫ বছর বয়সী ইসরায়েলি আদা সাগি। গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তির আগে তার ছেলে নাওম সাগি বিবিসিকে বলেছিলেন, 'আমরা আজ রাতের তালিকা প্রকাশ হওয়ার জন্য এখনও অপেক্ষা করছি; এটি নির্যাতন, তিনি (আদা সাগি) আজ মুক্তির তালিকায় আছেন কি না সেটি দেখার জন্য পুরো পরিবার অপেক্ষা করছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেখা দরকার যে প্রক্রিয়াটি বাস্তবে রূপ পাচ্ছে, প্রতিদিন জিম্মিরা মুক্তি হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।' তিনি যোগ করেন, 'অবশ্যই উভয়পক্ষে প্রতি বিশ্বাস খুবই ক্ষীণ।' শনিবার যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের মধ্যে আদা সাগি ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইসরায়েল ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জন নারী ও ১৫ জন কিশোর-কিশোরী রয়েছে।