ইসরায়েল যুদ্ধের প্রতিবাদে পেন আমেরিকা উৎসব থেকে সরে দাঁড়ালেন লেখকরা
লরি মুর এবং মিশেল আলেকজান্ডার সহ এক ডজনেরও বেশি বিশিষ্ট লেখক এবং সাহিত্যিকরা পেন আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস ফেস্টিভ্যাল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের দ্বারা সংঘটিত 'গণহত্যার' বিরুদ্ধে সংগঠনটির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার প্রতিবাদে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
নাওমি ক্লেইন, মিশেল আলেকজান্ডার, হিশাম মাতার, ইসাবেলা হাম্মাদ এবং জাইনা আরাফাত সহ লেখকদের একটি দল পেন আমেরিকাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিটি প্রকাশ করেছে লিটারারি হাব।
প্রকাশিত খোলা চিঠিতে, লেখকরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা পেন আমেরিকাকে, গত ৭৫ বছর ধরে নিপীড়িত ও উচ্ছেদ করা শক্তি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি লেখকদের সাথে 'দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে' ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, 'ফিলিস্তিনের কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিকগণ তাদের ও তাদের পরিবারের জীবনসহ সবকিছুর ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের কাছে বার্তা পৌছিয়ে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও পেন আমেরিকা গত ৭৫ বছর ধরে তাদের নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুত করা শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে।'
লেখিকা নাওমি ক্লেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন যে তিনি পাঁচ মাস আগে উৎসবের সহ-সভাপতি হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ পেয়ে সম্মানিত বোধ করেছিলেন। তবে গাজা নিয়ে পেনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। তার ভাষ্যে, 'এরপর আমি দেখেছি গাজা নিয়ে পেন কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কতটা নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ ছিল তারা।'
গত মাসে রোক্সানে গে, মাজা মেঙ্গিস্তে এবং নানা কোয়ামে অ্যাডজেই-ব্রেনিয়াহসহ শত শত লেখক ইসরায়েলের হাতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, লেখক ও কবিদের হত্যার বিষয়ে নীরবতার নিন্দা জানিয়ে পেনকে চিঠি দিয়েছেন। তারা সংস্থাটির সমালোচনা করে বলেছেন যে, পেন শুধু তার ওয়েবসাইটে প্রেস রিলিজে নিন্দা জানিয়ে তার দায় সেরেছে।
লিটারারি হাব জানিয়েছে, চিঠিতে এখন পর্যন্ত ১৩০০ এরও অধিক লেখক স্বাক্ষর করেছেন।
২০০৪ সালে সালমান রুশদি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, পেন ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস ফেস্টিভাল একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক সাহিত্য অনুষ্ঠান। তবে পেন আমেরিকা এখনও ২০২৪ সালের উৎসবের জন্য বক্তাদের তালিকা প্রকাশ করেনি, তবে চিঠি দেওয়া লেখকরা বলেছেন যে তাদের প্রত্যেককে স্পিকার এবং মডারেটর হিসেবে কাজ করার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল।
চিঠিতে স্বাক্ষর দেওয়া ওয়ার্কার রাইটার্স স্কুলের সদস্যরা স্বীকার করেছেন যে সমালোচনার পর পেন আমেরিকা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন–পেনের ওয়েবসাইট আপডেট করা এবং নতুন করে বিবৃতি দেওয়া। তবে লেখকরা জানিয়েছেন এই পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত নয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় পেন আমেরিকার যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সুজান ট্রিমেল গার্ডিয়ানকে বলেন, 'যে-সব লেখক পেন আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করি।'
তিনি বলেন, 'পেন আমেরিকা বাকস্বাধীনতা এবং লেখকদের ভূমিকার জন্য নিবেদিত। গাজায় ভয়াবহ ও ক্রমবর্ধমান সংকট এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও জিম্মিদের ওপর এর প্রভাবের ঘটনায় আমরাও উদ্বিগ্ন। আমরা সেইসব কবি, লেখক, পণ্ডিত ও লেখকদের পাশে রয়েছি, যাদের জীবন এই যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।'
সুজান যোগ করেন, 'ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস উৎসবে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, লেখালেখি হচ্ছে ব্যক্তিগত বিবেকের বহিঃপ্রকাশ। আমরা সেইসব লেখকদের সম্মান করি যারা নিজের বিশ্বাস ও চিন্তাচেতনাকে গুরুত্ব দেয়। আমরা এসব লেখকদের এই উৎসবের অংশ হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি কারণ আমরা তাদের কণ্ঠস্বরকে মূল্য দেই এবং আমরা তাদের কথা বলার ইচ্ছার প্রশংসা করি। আমরা তাদের উদ্বেগের জবাব দিতে চাই।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন