এক মাস ব্যাট ছুঁয়ে দেখেননি কোহলি
কীভাবে তিনি এতো রান করেন! সেই কৌশল বুঝতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে প্রতিপক্ষ শিবির। বিপক্ষ দলের অনেকের কাছেই তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে আদর্শ। অবশ্য কেবল ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিই নন; তার অনুশীলন, ফিটনেসও তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে দৃষ্টান্ত। কিন্তু সেই কোহলিই এতোটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে, সব ছেড়ে ক্রিকেট থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। মানসিক অবসাদে খেই হারিয়ে ফেলা ভারতীয় ক্রিকেটের এই মহাতারকা টানা এক মাস ব্যাট স্পর্শ করেননি!
শুনতে অবাক লাগলেও কোহলির জীবনে এমন সময়ই গেছে। স্টার স্পোর্টসের শো 'বিরাট: হার্ট টু হার্ট'- এ নিজের খারাপ সময় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। খারাপ সময়ে নিজের সঙ্গে নিজেকে কতোটা লড়াই করতে হয়েছে, এই অনুষ্ঠানে সেই গল্প শুনিয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।
যার ব্যাটে রানের ফোয়ারা বইতো, সেঞ্চুরি করতেন মুড়ি-মুড়কির মতো; সেই কোহলিই পার করছেন কঠিন সময়। দীর্ঘদিন ধরে তার ব্যাটে রান নেই, সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে। সেঞ্চুরি না পেলেও রোন করায় ধারাবাহিক ছিলেন ডানহাতি এই টপ অর্ডার। কিন্তু একটা সময়ে এসে সেই ধারাতেও থাকা হয়নি কোহলির। যেন রান করতেই ভুলে যান তিনি। যে কারণে মাঝে লম্বা সময় বিরতিতে থাকেন, এর মধ্যে এক মাস ব্যাটই হাতে নেননি।
কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কোহলি বলেন, 'স্বীকার করতে আমার কোনো লজ্জা নে যে মানসিকভাবে আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি। সম্প্রতি উপলব্ধি করতে পারি, তাড়নার ক্ষেত্রে নিজেকে ফাঁকি দিচ্ছি। নিজেকে জোর করে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে, 'আমার ভেতর তাড়না আছে।' কিন্তু শরীর আমাকে বলছিল থেমে যেতে। আমার মাথা আমাকে বলছিল একটু পিছু হটতে ও বিরতি নিতে।'
এমন সময়ের সঙ্গে দেখা হবে, এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না দৃঢ়চেতা সম্পন্ন কোহলি। তবে একটা সময়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে লড়াই শুরু করেন তিনি, 'আমাকে মানসিকভাবে অনেক শক্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয় এবং আমি আসলেও তা। কিন্তু সেটিরও একটি সীমা আছে এবং সেই সীমা মেনে নেওয়া উচিত। নইলে তা (মানসিক) স্বাস্থ্যের জন্য আরও খারাপ হতে পারে। এই সময়টা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, যেসব আমি আসতে দিতে চাইনি। তবে শেষ পর্যন্ত যখন তা এলো, আমি আলিঙ্গন করেই নিয়েছি।'
কোহলি মনে করেন মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার ভান ধরার চেয়ে দুর্বলতা মেনে নেওয়াটা ভালো। তার ভাষায়, 'এ রকম কিছু সবার সঙ্গেই হতে পারে। কিন্তু আমরা এসব প্রকাশ করি না, কারণ দ্বিধায় থাকি। আমরা চাই না লোকে মনে করুক যে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মানসিক দুর্বলতা স্বীকার করে নেওয়ার চেয়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকার ভান ধরা আরও অনেক বেশি খারাপ।'